এসএসসি পরীক্ষার পর কী করবে

যশোর পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীছবি: প্রথম আলো

প্রখ্যাত লেখক সুকুমার বড়ুয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন:
‘সারা দিনই ব্যস্ত থাকি
কোথায় অবসর?
বিচিত্র এই মনকে বলি
যা খুশি তা–ই কর।’
আচ্ছা, অবসরের কথা বললাম কেন? নিশ্চয়ই বুঝতে কারও বাকি নেই। তোমরা যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছ, তাদের উদ্দেশ্যেই আমি কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। কী শুনবে তো?

একজন মানুষ যে কাজে খুশি থাকেন, সেই কাজই করে থাকেন। কে কোন কাজে খুশি থাকতে পারেন, তা পুরোপুরি বলা যায় না। একেকজনের একেক কাজ পছন্দ। একেকজনের রুচি একেক রকম। আর এটাই স্বাভাবিক।

তোমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ অতিক্রম করতে চলেছ। এসএসসি পরীক্ষা শেষ। যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলে। মাথার ওপর থেকে যেন একটি পাহাড় নেমে গেছে। পাথর সরে গেছে। মেঘ কেটে গেছে। এবার শুধু ঘুম আর ঘুম। বিশ্রাম আর বিশ্রাম। কিন্তু-

সূর্যের তেজে অনেকক্ষণ কি ঘুমানো যায়? সবাই কি রাতদিন ঘুমায়? নাকি কেউ কেউ সূর্যের আলো গায়ে মাখতে চায়? কেউ কেউ তো নিজেই আলো হতে চায়। আলো বিকিরণ করতে চায়। স্বপ্নের মতো গড়তে চায় নিজেকে। বর্তমানেই দেখতে পায় ভবিষ্যৎকে। তারা কী করে? তারা কী যে করে বলে শেষ করা যায় না।

যাক, এবার আমরা কী করব বা কী করতে পারি একটু ভেবে নিলে কেমন হয়? চলো তাহলে ভাবি।

১. জানতে হবে অনেক কিছু

আচ্ছা, যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁরা কী করেছেন আসলে? উত্তরে বলা যেতে পারে, তাঁরা অনেক কিছুই করেছেন। তবে বই পড়েছেন বেশি বেশি। কী ধরনের বই? এটি আসলে একেকজনের একেক রকম হতে পারে। মোটাদাগে এটা বলা যায়, নানা ধরনের বই পড়েছেন। বিচিত্র ধরনের বই পড়ে তাঁরা নিজেদের মনোজগৎ আলোকিত করেছেন। একটা গল্পের বই পড়ে ঘটনার সঙ্গে একাত্ম হতে পারার মজা যে একবার পেয়েছে, সে বই পড়া কি ছাড়তে পারে? এমন মজা, এমন আনন্দের তুলনা কি হয়? প্রবন্ধের বই পড়ে তো প্রতিটি বাক্যের মধ্যেই যেন জানার খোরাক থাকে। একেক ধরনের বই একেকভাবে হৃদয়কে আলোড়িত করে, আন্দোলিত করে। অতএব কলেজের পড়ার চাপ শুরু হওয়ার আগেই চিরায়ত বইগুলো পড়ে নেওয়া যায়। পড়েই দেখ না, দেখবে জীবন কত সুন্দর! কত অর্থবহ!

২. অন্য ভাষা মন কি টানে?

পৃথিবীতে কত ভাষা আছে রে! সব ভাষা কি জানা সম্ভব? কিছুতেই না। দরকারও নেই। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। এর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তাঁর উল্লেখযোগ্য পাণ্ডিত্য ছিল। আমরা হয়তো অত ভাষা শিখতে পারব না, কিন্তু মাতৃভাষা ছাড়াও অন্তত দুয়েকটি ভাষা আমাদের জানা জরুরি। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা জানা খুবই প্রয়োজন। ইংরেজি না জানলে পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি কত প্রয়োজন, আমরা সবাই জানি। তাহলে আর দেরি কেন? যেকোনো একটি ভালো জায়গায় ইংরেজিটা শিখে ফেলি? এমনকি নিজে নিজে হলেও।

৩. চলো শিখি কম্পিউটার

এখন কম্পিউটার আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়গুলো না জানলে আমাদের পিছিয়ে থাকতেই হবে। এটা কি বেশি বললাম? নিশ্চয়ই না। অতএব কম্পিউটারের এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টসহ কিছু বিষয় আয়ত্ত করা খুবই দরকার। সম্ভব হলে হার্ডওয়্যারসহ অ্যাডভান্স কত কিছু আছে শেখার! ডিজাইন, প্রোগ্রামিংও তো কেউ কেউ শিখে নেয়। আরও কত কিছু শেখে! কী শিখবে তো?

৪. চলো দেখি জগৎটাকে

‘থাকব না কো বদ্ধঘরে দেখব এবার জগৎটাকে’—এমন কথা সেই কবেই পড়েছি! বাইরের জগৎটা কেমন, তা জানার আগ্রহ থাকে অনেকের। এই সুযোগে দেশের বা বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঘুরে দেখা যায়। দেশের ভেতরে কত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, দেখলে চমকে যাবে। মন আনন্দে ভরে উঠবে। কক্সবাজার, সুন্দরবন, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুয়াকাটা আরও কত জায়গা আছে দেখার! এসব জায়গার অপরূপ সৌন্দর্যে মন নেচে উঠবে। বাড়বে জানার পরিধিও।

৫. হাত বাড়িয়ে দিই

হাত বাড়ানো যায় দুভাবে। কিছু চাওয়ার জন্য এবং কিছু দেওয়ার জন্য। হাত দিয়ে কাউকে ধাক্কা দিতে পারি। আবার হাত দিয়ে কাউকে টেনে তুলতে পারি। নিশ্চয়ই ভালো-মন্দ বুঝে আমরা হাতকে কাজে লাগাব। তাই না? এবার বলি আসল কথা। আশপাশের অন্তত একজন নিরক্ষরকে যদি অক্ষর শেখাতে পারি, কাজটা কেমন হয়? যাদের পক্ষে সম্ভব, ভেবে দেখতে পার।

৬. গড়তে পারি বাগান, নামতে পারি উৎপাদনে

অনেকে শখ করে বাগান করে থাকে। সেখান থেকে অনেক ফলমূল, শাকসবজি, ফুল ইত্যাদির ফলন দেখা যায়। এ রকম কাজ করার মধ্য দিয়ে প্রচুর আনন্দ জোটে। খেতেও পারা যায়। নিজের ফলানো ফসল খাওয়ার যে কী মজা, তা নিশ্চয়ই বানান করে বুঝিয়ে দিতে হবে না। তাহলে আর দেরি কেন? কাজে নেমে পড়লেই তো হয়।

৭. নিজের কাজ নিজে করি, নিজের মতো জীবন গড়ি

আসলে কোনো পরামর্শ নয়। আমরা আমাদের জীবনকে জানি। নিজের মতো জীবন গড়ার জন্য যা কিছু দরকার, তা–ই তো করা উচিত। তাই না? নিজের কাজ নিজে করব। নিজের মতো নিজে চলব। নিজেই বড় হব। বড় হতে যা করা দরকার, তা–ই করব। অনেক কিছুই করব। কারণ জীবন আমার। তাকে গড়ার দায়িত্বও আমার। স্বপ্নের মতো নিজেকে সাজিয়ে তুলব। পৃথিবী আমাকে ডাকছে। তার ডাক কি আমি শুনতে পাচ্ছি? তার ডাকে কি সাড়া দিচ্ছি?

রমজান মাহমুদ, সিনিয়র শিক্ষক, গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল, ঢাকা