জীববিজ্ঞান ২য় পত্র | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৩

প্রশ্ন

ক. দৈহিক স্থূলতা কী?

খ. ইমালসিফিকেশন বলতে কী বুঝায়?

গ. খাদ্য পরিপাকে Q অংশের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. R অংশে পরিশোষণের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. দেহে অধিক পরিমাণ চর্বি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট অস্বাভাবিকতাকে দৈহিক স্থূলতা বলে।

খ. লাইপেজ এনজাইমের সহায়তায় স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাক হলেও প্রথমে স্নেহ বা চর্বিকে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হতে হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে যকৃত থেকে আগত পিওরস ক্ষরিত হয়। এ পিওরসে অবস্থিত পিত্ত–লবণের প্রভাবে চর্বির ক্ষুদ্র কণাগুলো ভেঙে অতি ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াকেই ইমালসিফিকেশন বলে।

গ. Q অংশটি অগ্ন্যাশয়। এটি মানুষের পরিপাকতন্ত্র পাকস্থলীর নিচে অবস্থিত নলাকৃতির মরিচের মতো একটি গ্রন্থি। খাদ্য পরিপাকে গ্রন্থিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রোটিনজাতীয় খাদ্য পরিপাক: অগ্ন্যাশয় রসের অন্যতম প্রোটিন পরিপাককারী এনজাইম ট্রিপসিনোজেন। এটি এন্টারোকাইনেজ নামক উদ্দীপক দ্বারা সক্রিয় ট্রিপসিন নামক এনজাইমে পরিণত হয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোনজাতীয় সরল আমিষকে ভেঙে ডাইপেপটাইড ধরনের সরল আমিষ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড এককে পরিণত করে। এ ছাড়া কাইমোট্রিপসিন, কার্বোক্সি পেপটাইডেজ, অ্যামিনো পেপটাইডেজ, ডাইপেপটাইডেজ, কোলাজিনেজ প্রভৃতি এনজাইম বিভিন্ন ধরনের পলিপেপটাইডকে ভেঙে সরল পেপটাইড ও অ্যামাইনো অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে।

শর্করাজাতীয় খাদ্য পরিপাক: অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত অ্যামাইলেজ এনজাইম দ্বারা স্টার্চ ও গ্লাইকোজেন মল্টোজে রূপান্তরিত হয়। আবার অগ্ন্যাশয়িক মল্টেজ এনজাইম দ্বারা মল্টোজ গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়।

লিপিডজাতীয় খাদ্যের পরিপাক: অগ্ন্যাশয়িক লাইপেজ এনজাইম দ্বারা চর্বি বা লিপিড ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। আবার ফসফোলাইপেজ ও কোলেস্টেরল অ্যাস্টারেজ দ্বারা যথাক্রমে ফসফোলিপিড ও কোলেস্টেরল এস্টার ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। এভাবেই ক্ষুদ্রান্ত্রে অগ্ন্যাশয় রসের প্রভাবে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য শোষণযোগ্য সরল উপাদানে পরিণত হয়।

ঘ. R অংশটি ক্ষুদ্রান্ত। মানুষের পরিপাকতন্ত্রে পরিপাককৃত খাদ্যসার পরিশোষণের প্রধান অংশ হলো ক্ষুদ্রান্ত। ক্ষুদ্রান্তে মিউকোসা স্তরে ভিলাই হলো পরিশোষণের একক। অ্যামাইনো অ্যাসিড ও সরল শর্করা ভিলাই মধ্যস্থ কৈশিক জালিকার রক্তে শোষিত হয় এবং পোর্টালতন্ত্রে বাহিত হয়। অন্যদিকে চর্বিজাতীয় খাদ্যসার ভিলাইয়ের লসিকায় শোষিত হয় এবং লসিকাতন্ত্র দিয়ে পরিবাহিত হয়। বেশির ভাগ পানিই ক্ষুদ্রান্তে শোষিত হয়। মানুষের খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্যই হলো দেহের পুষ্টি নিশ্চিত করা। গৃহীত খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে পরিপাক হয়ে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে খাদ্যসার দেহের প্রতিটি কোষে পৌঁছায়। এখানে বিপাকের মাধ্যমে আমরা শক্তি পাই। পরিপাকতন্ত্র হতে খাদ্যসার R অংশ (ক্ষুদ্রান্তে) আসে। কাজেই ক্ষুদ্রান্তে খাদ্য পরিশোষণ না হলে তা দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি অর্জনে কোনো ভূমিকা রাখবে না। খাদ্যসার বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে পায়ুপথ দ্বারা নিষ্ক্রান্ত হয়ে যাবে, যা পরিপাকের উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং R অংশে খাদ্যসারের পরিশোষণ না ঘটলে তা দেহের কোনো কাজেই আসবে না। তাই R অংশে (ক্ষুদ্রান্ত) পরিশোষণ দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক
রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা