এবারও পাঠ্যবইয়ের সংকট
বিনা মূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে এবারও সংকটে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র চার দিন বাকি। এখনো মাধ্যমিকের প্রায় ৪৪ শতাংশ পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পারেনি বিনা মূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের দায়িত্বে থাকা সরকারি এই সংস্থা। ফলে এবারও মাধ্যমিকের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বছরের শুরুতে সব বই হাতে পাবে না।
এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারীদের আশঙ্কা, মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী; বিশেষ করে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা—সব বিষয়ের বই হাতে পেতে পুরো জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে।
অবশ্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সংকট নেই। এই স্তরে শতভাগ পাঠ্যবই মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে বিতরণব্যবস্থায় ত্রুটি না হলে বছরের শুরুতেই প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই হাতে পাবে।
এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারীদের আশঙ্কা, মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী; বিশেষ করে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা—সব বিষয়ের বই হাতে পেতে পুরো জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে কয়েকটি করে হলেও বই দেওয়ার পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে আজ রোববার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণ (পিডিএফ) প্রকাশ করতে যাচ্ছে এনসিটিবি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে (www.nctb.gov.bd) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের ৬৪৭টি পাঠ্যপুস্তকের পিডিএফ কপি দেওয়ার কথা রয়েছে। ফলে কেউ চাইলে শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই সেখান থেকে বই ডাউনলোড করে নিতে পারবে।
পিছিয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরে মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরে (ইবতেদায়ি স্তরসহ) ২১ কোটি ৪৩ লাখের বেশি কপি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। বিদায়ী বছরের তুলনায় এবার পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকে ছাপা শেষে বাঁধাই হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ বই। তবে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শনসহ (পিডিআই) আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ৫৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৪৪ শতাংশ পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করা হয়নি।
শ্রেণি বিবেচনায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে অষ্টম শ্রেণির বই। এই শ্রেণির মোট বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটির ২ লাখের বেশি। এর মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বই সরবরাহ করা গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ শতাংশ বই এখনো সরবরাহ হয়নি।
এ ছাড়া সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি বইয়ের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। ষষ্ঠ শ্রেণির ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি বইয়ের মধ্যে সরবরাহ হয়েছে ৬৭ শতাংশের বেশি। নবম শ্রেণির ৫ কোটি ৭০ লাখের বেশি বইয়ের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ। আর ইবতেদায়ি স্তরের ৩ কোটি ১১ লাখের বেশি বইয়ের মধ্যে ৯৪ শতাংশের বেশি বই সরবরাহ করা হয়েছে।
শ্রেণি বিবেচনায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে অষ্টম শ্রেণির বই। এই শ্রেণির মোট বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটির ২ লাখের বেশি। এর মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বই সরবরাহ করা গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ শতাংশ বই এখনো সরবরাহ হয়নি।
সব বই পেতে পুরো জানুয়ারি লাগতে পারে
বিদায়ী বছরেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে দেরি করেছিল এনসিটিবি। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাস পর সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হয়।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, বিদায়ী বছরের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করা হয়েছিল। নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে (নভেম্বরে) ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে আবার দরপত্র আহ্বান করে এখন বই ছাপানো হচ্ছে।
এর পাশাপাশি ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন পেতেও দেরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, পরে ছাপার কার্যাদেশ ও চুক্তি করতেও সময় লেগেছে। সব মিলিয়ে এবারও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপায় দেরি হচ্ছে।
শেষ সময়ে (নভেম্বরে) ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে আবার দরপত্র আহ্বান করে এখন বই ছাপানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বছরের বাকি চার দিনে হয়তো আরও বেশ পরিমাণ বই ছাপিয়ে সরবরাহ করা যাবে। তাঁদের পরিকল্পনা হলো বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে অন্তত দু-একটি করে বই দেওয়া। সেটি করা সম্ভবও হবে। তবে মাধ্যমিক স্তরে, বিশেষ করে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে জানুয়ারির ১৫-২০ তারিখ লেগে যেতে পারে।
যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে ফেব্রুয়ারিও গড়াতে পারে।
বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী বই হাতে পাবে। এর মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি স্তরে প্রায় শতভাগ বই পাবে। ১ জানুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিরও প্রায় শতভাগ বই সরবরাহ করা যাবে। আর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৫০ শতাংশের বেশি বই ১ জানুয়ারির মধ্যে চলে যাবে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই পেয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী
এনসিটিবিতে নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী এনসিটিবির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
জানতে চাইলে মাহবুবুল হক গতকাল শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী বই হাতে পাবে। এর মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি স্তরে প্রায় শতভাগ বই পাবে। ১ জানুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিরও প্রায় শতভাগ বই সরবরাহ করা যাবে। আর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৫০ শতাংশের বেশি বই ১ জানুয়ারির মধ্যে চলে যাবে। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই পেয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।