শিক্ষকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার, ক্লাসে ফেরার ঘোষণা

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২১ দিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে আমরণ অনশন শুরু করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১ আগষ্ট
ছবি: মোশতাক আহমেদ

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। আজ মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত জানান তাঁরা।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে জানানো হয়, জাতীয়করণসংক্রান্ত বিষয়ে যে দুটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে শিক্ষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া সরকারি–বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারীদের বৈষম্য দূর করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর্থিক বিষয়টি নির্ধারণ করার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এ অবস্থায় তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন তাঁরা ক্লাসে ফিরে যাবেন।

জানা গেছে, ধানমন্ডিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার এবং শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২১ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে গতকাল কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে ১১ জুলাই শিক্ষকদের এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। অবস্থান চলার মধ্যে ১৯ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষক ও অন্য শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এ বিষয়ে (জাতীয়করণ) আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে জাতীয়করণের যৌক্তিকতা আছে কি না, সেটাসহ শিক্ষা, শিক্ষকদের সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগস্টের শেষ নাগাদ এই কমিটি গঠন করা হতে পারে।

তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বিষয়ে গাজীপুরে শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর আয়োজিত দুই দিনের কর্মশালায়ও যাননি তাঁরা।

আরও পড়ুন
জাতীয়করণসংক্রান্ত দুটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে শিক্ষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া সরকারি–বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারীদের বৈষম্য দূর করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক বিষয়টি নির্ধারণের পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এ অবস্থায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা ক্লাসে ফিরে যাবেন।
শেখ কাওছার আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি

বর্তমানে সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি, বাকিগুলো বেসরকারি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এমপিওভুক্ত। এর মানে হলো এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের (সরকারি) দাবিতে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকেরা।