১১টি হলেই খাওয়ার পানির কষ্ট

খাওয়ার পানির ব্যবস্থাসহ ৭ দফা দাবিতে গতকাল হলের কার্যালয়ে তালা দেন জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সুস্মিতা রায়। থাকেন জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের ছয়তলায়। গত রোববার সকাল ৯টায় তিনি ছয়তলা থেকে নিচতলায় নামেন খাওয়ার পানির জন্য। ওই হলে শুধু নিচতলাতেই খাওয়ার পানি মেলে। কিন্তু নিচে এসেই পানির ফিল্টারের সামনে দেখতে পান ছাত্রীদের ভিড়। তাঁরাও পানি নিতে এসেছেন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। পরে হলের নিজের কক্ষে ফিরে যান তিনি।

সুস্মিতা রায় বলেন, প্রায় সময় পানি না পেয়ে নিজেই ফুটিয়ে নেন। কিন্তু তাতেও নিস্তার নেই। আয়রনের কারণে সে পানিও মুখে নেওয়া যায় না।

গতকাল বৃহস্পতিবার খাওয়ার পানির ব্যবস্থাসহ ৭ দফা দাবিতে হলের কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টা তালা দিয়ে রাখেন জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের ছাত্রীরা।

খাওয়ার পানির এই কষ্ট শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হলেই একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ছাত্রীদের চারটি হলের মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে দুটি করে একটি প্রীতিলতা হলে তিনটি ফিল্টার থাকলেও সচল থাকে একটি। আবার শামসুন্নাহার হলে ফিল্টারই রয়েছে একটি। এই চার হলে ছাত্রী রয়েছেন অন্তত চার হাজার।

শিক্ষার্থীরা জানান, বাধ্য হয়ে কলের পানি পান করতে হয়। এ কারণে পেটের পীড়াসহ নানা অসুখে ভুগতে হচ্ছে তাঁদের।

শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি দায়িত্ব। সুপেয় পানি না পেলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারেন।
সুশান্ত বড়ুয়া, সদস্যসচিব, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, পেটের পীড়া নিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসেন। মাসে এই সংখ্যা অন্তত ৭০ জন। তবে তা পানির সমস্যা থেকে পীড়া কি না, পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, খাওয়ার পানির সংকট পূরণের জন্য প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবেন।

শেখ হাসিনা হল কার্যালয়ে তালা

হলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সাত দফা দাবিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের কার্যালয়ে তালা দেন ছাত্রীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তালা দেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে কর্তৃপক্ষকে দুই দিনের সময় দিয়ে তালা খুলে দেন।

ছাত্রীদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নিয়মিত পানির ট্যাংক ও শৌচাগার পরিষ্কার করা, দুই কর্মদিবসের মধ্যে হলের বর্ধিত অংশ খুলে দেওয়া, খাবারের মান বাড়ানো, রাতে ডাইনিং চালু করা ইত্যাদি।

জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী রওজাতুল জান্নাত বলেন, খাওয়ার পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া কলের পানিতেও আয়রন থাকে। অনেকের অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময় লিখিত অভিযোগ দিলে তাঁরা ব্যবস্থা নেননি। এ জন্য তালা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে হলের প্রাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল হকের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এর আগে গত ১০ মার্চ আট দফা দাবিতে প্রাধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন প্রীতিলতা হলের ছাত্রীরাও। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেই আট দাবি এখনো পূরণ হয়নি।

ছাত্রদের হলেও সংকট

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হল রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে শাহজালাল, শাহ আমানত, আলাওল, এ এফ রহমান, সোহরাওয়ার্দী ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ডাইনিং বাদে আর কোনো জায়গায় পানির ফিল্টার নেই। শহীদ আব্দুর রব হলে ডাইনিং ছাড়াও দুটি আলাদা জায়গায় রয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় এগুলো নষ্ট থাকতে দেখা যায়। আর আলাওল হলের ফিল্টারটি নষ্ট এক মাস ধরে। এই সাত হলে ছাত্র আছে চার হাজারের বেশি।

হলগুলোতে সুপেয় পানির সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, সব হলেই এই সমস্যা রয়েছে। শুধু ফিল্টার দিয়ে তা সমাধান করা সম্ভব নয়। গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে।

বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিক্ষার্থীরা পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের সদস্যসচিব চিকিৎসক সুশান্ত বড়ুয়া। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি দায়িত্ব। সুপেয় পানি না পেলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারেন।