শহর থেকে একটু বাইরে
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজক কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শহরের বাইরে টুসেনফ্রেড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে আসার সুযোগ করে দেয়। অসলো শহরের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই পার্কটি। পার্কটি নরওয়ের সবচেয়ে বড় অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, বছরে ৫ লাখের বেশি পর্যটক এখানে আসেন। বড় বড় ৩০টির বেশি রাইডে চড়ার সুযোগ আছে। সময় কাটাতে আমাদের গণিতবিদেরা নানা রাইডে চড়ে আনন্দ পেয়েছে।
মনোমুগ্ধকর দেশ নরওয়ে
নরওয়ের সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়মকানুন অনেক আধুনিক। এখানে কোনো দম্পতির সন্তান হলে মা ও বাবা দুজনই ছুটি পান। মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ মাস আর পিতৃত্বকালীন ছুটি ৩ মাস। আধুনিক দেশ, তার নাগরিকদের আধুনিক সব সুবিধা দিচ্ছে। নরওয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য যেকোনো দেশের চেয়ে খুবই ভালো। অপরাধের হার খুবই কম, যে কারণে কারাগারগুলোর পরিবেশ খুব ভালো। যে অল্প কজন কারাবন্দী থাকেন, তাঁরা নাকি জেল থেকে ছুটি নিতে পারেন। একটা বিষয় খেয়াল করেছি, এখানে কারাগারকে সংশোধনকেন্দ্র বলা হয়। আমার কাছে মনে হলো, কারাগার এখানে আসলে আয়েশী সংশোধনকেন্দ্র। জেলখানায় থাকার ঘরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত গোসলখানা পর্যন্ত আছে। আরও আছে বড় পর্দার টিভি, ফ্রিজ, দামি দামি আসবাব। জেলে থাকা মানুষেরা মাঝেমধ্যে ভুলে যান যে তাঁরা আসলে কোথায় আছেন।
হরেক রকমের খাবার
নতুন দেশে এলে খাবারের স্বাদ নেব না, বিষয়টি বেমানান। নরওয়েতে খাবারদাবারের দাম কিন্তু বেশ ব্যয়বহুল। অধিকাংশ ঐতিহ্যবাহী খাবার মাছ, আলু আর সামুদ্রিক নানা উদ্ভিদে তৈরি। এখানে প্রতিদিন সকালের নাশতায় পাউরুটি, পনির, ডিম, কফি খেতে হয়। নরওয়ের বিখ্যাত খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ফারিক্যাল, যা খাসির মাংস ও বাঁধাকপি দিয়ে তৈরি হয়। বার্নোস্ট নামের বাদামি চিজও এখানে বেশ জনপ্রিয়।
আয় আয় সূর্যি মামা!
বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথম আমরা চমকে যাই নরওয়ের আবহওয়া দেখে। শুনলাম নরওয়ে প্রায় আট মাস বছরে বরফের নিচে ঢাকা থাকে। ২১ নভেম্বরের থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সূর্যি মামা নরওয়ের আকাশ থেকে হারিয়ে যান। আবার ২১ মে থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সারাক্ষণ ২৪ ঘণ্টা সূর্যের দেখা মেলে। সারা জীবন রাতে চাঁদ দেখা মানুষ আমি, এখানে আসার পর থেকে রাত ১টার সময় জানালার ফাঁক দিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো রাতে সূর্য দেখেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য।
সবুজ ক্যাম্পাস
গত কয়েক দিনে আমাদের খুদে গণিতবিদেরা অসলো শহরের নানা দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ পায়। রাজার বাড়ি রয়েল প্যা লেস, ন্যাশনাল থিয়েটার, নোবেল পিস সেন্টার থেকে শুরু করে ন্যাশনাল মিউজিয়াম। এরই মধ্যে আমরা একদিন অসলো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখেছি। গ্রীষ্মকালে ছুটির জন্য ক্যাম্পাস খালি, ছিল না শিক্ষার্থীদের ভিড়। আমাদের গাইড ফাহ্দ বাংলাদেশের ছেলে। তিনি বর্তমানে অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে পিএইচডি করছেন। তাঁর বিভাগসহ পুরো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখালেন ফাহ্দ। ১৮১১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যে কারণে ক্যাম্পাসে পুরোনো স্থাপত্যসহ আধুনিক সব ভবনের দেখা মেলে।
আনন্দ নিয়েই নরওয়ের সবকিছু দেখছে খুদে গণিতবিদেরা। সবার আগামীকালের ফলাফল আর সমাপনী নিয়ে দারুণ প্রত্যাশা চোখেমুখে দেখা যাচ্ছে।