আগেই শুরু করে অনলাইনের সুফল পাচ্ছে ইউল্যাব

অনলাইনে ক্লাস চলছে পুরোদমে, তবে শিক্ষার্থীরা মিস করছেন তাঁদের প্রিয় ক্যাম্পাস। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইনে ক্লাস চলছে পুরোদমে, তবে শিক্ষার্থীরা মিস করছেন তাঁদের প্রিয় ক্যাম্পাস। ছবি: সংগৃহীত

‘ইউল্যাব েবার্ড অর্ব ট্রািস্টজের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আনিস আহমেদের তত্ত্বাবধানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি ২০০৭ সালে।’ আলাপের শুরুতেই বললেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপাচার্য এইচ এম জহিরুল হক। তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল যোগাযোগ সফটওয়্যার জুমের মাধ্যমে। উপাচার্য মুডল (moodle.org) নামে একটি অনলাইন িশক্ষা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কথা বলছিলেন। এই সাইটের মাধ্যমে শিক্ষকেরা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে তাঁদের লেকচার, পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার স্লাইড, নোটসহ নানা কিছু অনলাইনে তুলে দিতে পারেন। ছাত্রছাত্রীরাও মুডলে তাঁদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারেন। এ ছাড়া কোনো কারণে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে না পারলেও ক্লাসের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার সুযোগ থাকে।

এইচ এম জহিরুল হক বললেন, ‘২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সীমিত আকারে আমাদের অনলাইন কার্যক্রম চলছিল। ২০১৪ সালে আমরা নিয়ম করে দিই, শিক্ষকেরা যত বিষয়ে পড়ান, অন্তত একটি বিষয়ে ক্লাসরুমের পাশাপাশি মুডলে পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তখন থেকেই আমাদের ছাত্র-শিক্ষকেরা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেন। যার সুফল এখন আমরা ভোগ করছি।’

করোনাভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন বন্ধ হয়ে গেল, দুই দিনের মধ্যেই ক্লাস থেকে শুরু করে অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে চালু করেছিল ইউল্যাব। এমনকি প্রতি সেমিস্টারে ‘কারিকুলাম ইন্টিগ্রেশন’ নামে মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের প্রদর্শনীর যে আয়োজন করে, গত সেমিস্টারে সেটিও হয়েছে অনলাইনে।

ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা এ সময়ে ক্যাম্পাসে থাকলে নিশ্চয়ই সবাই মিলে ধুমধাম করে একটা সুখবর উদ্​যাপনের সুযোগ পেতেন। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ডস ইউনিভার্সিটিজ উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট (ডব্লিউইউআরআই) ২০২০ র​্যাঙ্কিংয়ে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশন’ বিভাগে বিশ্বের সেরা ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম হওয়ার স্বীকৃতি অর্জন করেছে ইউল্যাব।

গত ১১ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডব্লিউইউআরআইয়ের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মুন হোয়াই চ্যাং এই ঘোষণা দেন। ইউল্যাবকে কেন এই স্বীকৃতি দেওয়া হলো, সে কথা বুঝিয়ে বলছিলেন মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জুড উইলিয়াম হেনিলো। তিনি বললেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সমসাময়িক চাকরির বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের প্রোগ্রাম সাজায়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশন বিভাগে তাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাস্টার্স ইন কমিউনিকেশন প্রোগ্রামের থিসিস পদ্ধতিকে উপজীব্য করেই র​্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছি আমরা। আমাদের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তরের দুই বছরজুড়েই তাঁদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন, থিসিস তৈরি করেন। ব্যবহারিক দক্ষতা আছে বলেই ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের শিক্ষার্থীরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।’ ক্যাম্পাসে উদ্​যাপনের সুযোগ হয়নি, তবে এই অর্জন উপলক্ষে ১৫ জুলাই অনলাইনে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ।

থেমে নেই কিছুই। তবে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সাফফাত বলছিলেন, ‘আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসটা খুব সুন্দর। মোহাম্মদপুরে বেশ বড় জায়গা নিয়ে সবুজ ক্যাম্পাস। নতুন একটা লাল ভবন হয়েছে। সেখানে এক সেমিস্টার ক্লাস করেছি, এরপরই তো বন্ধ হয়ে গেল। অনলাইনে পুরোদমে ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু সবাই একসঙ্গে ক্লাসরুমে বসার যে একটা আনন্দ, সেটা মিস করছি। ক্যাম্পাসটাও খুব মিস করছি।’ সাফফাতের বাড়ি জামালপুরে। সেখানে বসেই, মুঠোফোনে গুগল মিটে ক্লাসে অংশ নেন তিনি। বাসায় কম্পিউটার নেই বলে কিছুটা সমস্যা হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা সহায়তা করেন। অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজগুলো হাতে লিখে, ছবি তুলে জমা দিয়ে দেন চতুর্থ বর্ষের এই ছাত্র।

িশক্ষক–িশক্ষার্থীরা কবে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। তাই সেভাবেই সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা করছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। এইচ এম জহিরুল হক বললেন, ‘কোর্সেরা নামের অনলাইন মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন তাঁদের পছন্দসই কোর্সগুলো বিনা মূল্যে করতে পারেন, সে রকম একটি ব্যবস্থা করেছি। এই দুর্যোগের সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একটা দল আমাদের সঙ্গে আছেন, তাঁরা বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করছেন। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা তাঁদের উন্নত মানের সেবা দিতে চাই।’