উপাচার্যের পদে প্রথা ভেঙে রেজিস্ট্রার

আইন বা প্রথা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া ‘নজিরবিহীন’।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আইন ও প্রথা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে সহ–উপাচার্যকে রুটিন দায়িত্বে বা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য করা হয়। সহ–উপাচার্য না থাকলে সেই দায়িত্ব পান কোষাধ্যক্ষ। যদি কোষাধ্যক্ষও না থাকে, তাহলে ডিন বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোটিই মানা হয়নি। ‘নজিরবিহীনভাবে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।

একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই গত ১৪ আগস্ট থেকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৯৭৭ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন আটকে যায়। অন্যান্য কাজেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ‘প্রশাসনিক প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে’ বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেয়।

আমার জানামতে শুধু শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার নজির নেই।
কামালউদ্দিন আহমেদ, বিদায়ী উপাচার্য

প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এ নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযোগ পাননি। তবে অন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আপত্তি তুলেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ হয়ে যাবে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩২২ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপকই আছেন ১০৪ জন। শেখ রেজাউল করিম শিক্ষক নন। তিনি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তার আগে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ–রেজিস্ট্রার ছিলেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করেছে, তাতে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গতি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক কোনো দিকেরই মর্যাদা সমুন্নত করে না। উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

শেখ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকার আপৎকালীন তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটিই তিনি পালন করছেন। তিনি কেবল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার কাজ করছেন। অন্য কোনো কাজ করছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য কামালউদ্দিন আহমেদ মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত দুই মাস আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। এরপর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২৬ জুলাই আবারও উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। অধ্যাপক কামালউদ্দিন বলেন, তাঁর জানামতে শুধু শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার নজির নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেও দিতে পারেনি। ডিনদেরও তালিকা নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু সমন্বয় করতে পারেনি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়োগ সুন্দর ও শোভনীয় নয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। অবশ্যই শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল।