কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে জীবনটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে: রাগীব ইয়াসির

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে সারা দেশে চার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাঁরা হলেন বিদ্যালয় পর্যায়ে (মাধ্যমিক) ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুপমা শারমীন, কলেজপর্যায়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুইন, মাদ্রাসায় চট্টগ্রামের ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ ফয়সাল আহমদ এবং কারিগরি শিক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন লালমনিরহাটের সরকারি আদিতমারী গিরিজা শংকর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী মো. রাগীব ইয়াসির রোহান। ২১ জুন তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী রাগীব ইয়াসির কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ

কারিগরি শিক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন লালমনিরহাটের সরকারি আদিতমারী গিরিজা শংকর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী মো. রাগীব ইয়াসির রোহান।
ছবি: খালেদ সরকার

প্রথম আলো: সারা দেশে কারিগরি শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর পুরস্কার পাওয়ায় তোমাকে অভিনন্দন।

রাগীব ইয়াসির: আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

পুরস্কার পাওয়ার পর তোমার বিদ্যালয়ে গিয়েছিলে?

রাগীব ইয়াসির: হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আমার পরিবার, আমার বর্তমান বিদ্যালয় ও পূর্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব—সবাই অনেক খুশি হয়েছেন। অনেকভাবে তাঁরা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

প্রশ্ন :

কারিগরি শিক্ষায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছ কী কী যোগ্যতায়?

রাগীব ইয়াসির: পূর্ববর্তী পাবলিক পরীক্ষার ফল, সামাজিক কর্মকাণ্ড, স্কাউটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার, নেতৃত্বের যোগ্যতা, আইসিটির দক্ষতা ইত্যাদি গুণাবলির ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

তো তোমার নিজের যোগ্যতাগুলো যদি বলতে?

রাগীব ইয়াসির: আমি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। ভোকেশনালে নবম শ্রেণিতে যে সমাপনী পরীক্ষা (বোর্ডের অধীন এ পরীক্ষা হয়) হয়েছে, সেখানেও জিপিএ-৫ পাই। এখন আমি এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী। আমি তৃতীয় শ্রেণি থেকে স্কাউটের সঙ্গে জড়িত। পঞ্চম শ্রেণিতে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম।

এটি স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ওই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলাম। আমি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কাউটের নেতৃত্ব দিই। এ ছাড়া ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় ও তৃতীয় সানসো স্কাউট জাম্বুরিতে আমার উপদল চতুর্থ স্থান লাভ করে। আমরা শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণ করি, বন্যার সময় বন্যার্তদের মধ্যে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করি। সংগঠনের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে দিই। আমি ২০১৯ সালে রংপুর বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্কাউট নির্বাচিত হয়েছিলাম। হামদ–নাতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে গিয়েছিলাম। দৌঁড়সহ বিভিন্ন রকমের খেলাধুলায় জেলা পর্যায়ে গিয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

তুমি কারিগরি শিক্ষায় পড়ছ কবে থেকে?

রাগীব ইয়াসির: আমি নবম শ্রেণি থেকে কারিগরি শিক্ষায় পড়ছি। এর আগে সাধারণ শিক্ষায় জেএসসি পাস করি।

প্রশ্ন :

সাধারণ শিক্ষা ছেড়ে কারিগরি শিক্ষায় গেলে কেন?

রাগীব ইয়াসির: ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা, প্রকৌশলী হব। আর কারিগরি শিক্ষায় মূলত হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে পড়লে প্রকৌশলী হওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। কারিগরি শিক্ষায় পড়লে পরবর্তীকালে বাস্তব জীবনেও তা কাজে লাগবে। এ জন্যই মূলত কারিগরি শিক্ষায় এসেছি। আমি মনে করি, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে জীবনটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এখানে নিজে নিজে কর্মসংস্থান (আত্মকর্মী) হওয়ার বিষয়টিও শেখানো হয়।

প্রশ্ন :

কারিগরি শিক্ষায় কি কোচিং-প্রাইভেট পড়তে হয়?

রাগীব ইয়াসির: করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এসএসসি পরীক্ষা তো হবেই। কিন্তু সিলেবাস তো শেষ করা যায়নি। তাই প্রাইভেট পড়তে হয়েছে। তবে এক-দুটি বিষয়েই তা সীমাবদ্ধ ছিল।

প্রশ্ন :

তুমি নিজের ইচ্ছায় কারিগরি শিক্ষায় গিয়েছ নাকি পরিবারের ইচ্ছায়?

রাগীব ইয়াসির: আমার পরিবারও চেয়েছিল এবং আমারও ইচ্ছা ছিল।

প্রশ্ন :

তোমার পরিবারের কথা যদি বলতে?

রাগীব ইয়াসির: আমার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বাবা স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক। আমার বড় বোন এখন উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রশ্ন :

তোমার স্বপ্নের কথা শুনতে চাই।

রাগীব ইয়াসির: আমার স্বপ্ন হলো সবার আগে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের সেবা করতে চাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা রক্ষার কাজে এগিয়ে যেতে চাই।

প্রথম আলো: তোমাকে ধন্যবাদ।

রাগীব ইয়াসির: আপনাকে এবং প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।