ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ

সুরাইয়া খানম
সুরাইয়া খানম

সংস্কৃতি অন্তঃপ্রাণ : সুরাইয়া খানম, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা
‘ছেলেবেলায় আমাকে ঘরে আটকে রাখলেও প্রাচীর টপকে চলে যেতাম বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়। পুরস্কার নিয়ে যখন বাড়ি ফিরতাম, অনেকে ভাবত কোনো ছেলে বোধ হয় গিফট পাঠিয়েছে। একপর্যায়ে বাসা থেকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য আসা শুরু হওয়ার পর সবাই বুঝতে পেরেছে।’ সুরাইয়া খানম তাঁর চড়াই–উতরাইয়ের গল্প শুরু করলেন এভাবে।

ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে বড় হওয়া সুরাইয়া এখন পড়ছেন ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে। প্রাণিবিদ্যার এই শিক্ষার্থীর পদচারণ সংস্কৃতির সব অলিগলিতে। বিতর্ক ক্লাবের সভাপতির পাশাপাশি কলেজের নানা আয়োজনে মুখ্য ভূমিকায় থাকেন তিনি।

গত ডিসেম্বরে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক দলের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি তিন বিভাগে সেরার মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন সুরাইয়া। নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদী একক অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বিজয়ী বিতর্ক দলের দলনেতা ছিলেন তিনি। শুধু অভিনয় কিংবা বিতর্কে নয়, স্নাতকে প্রথম শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এই শিক্ষার্থী।

সুরাইয়ার শুরুটা চার বছর বয়সে। সে বয়সেই ‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ...’ কবিতা আবৃত্তি করে পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন আবৃত্তি করে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০০৪-এ খুলনা বিভাগে প্রথম হন। উপস্থিত অভিনয় করে ২০০৭ সালে সারা দেশে তৃতীয় হন সুরাইয়া। আর বিতর্কে তাঁর অর্জনের গল্প বেশ লম্বা। সবশেষ ২০১৯ সালে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির নিপীড়নবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সুরাইয়ার দল।

এত সব অর্জন খুব সহজে এসেছে, তা নয়। ইডেন কলেজের এই ছাত্রী বলছিলেন, ‘আমি যখন জাতীয় পর্যায়ে উপস্থিত অভিনয় করে তৃতীয় হই, তখন আমার বেশ কিছু সুযোগ আসে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা একটা নাটকে অভিনয়ের সুযোগও পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে বেঁকে বসে। সবকিছু পেরিয়ে এখন যখন টিভিতে আমার বিতর্ক দেখানো হয়, তখন সবার উচ্ছ্বাস দেখে খুশি হই। অন্তত তাঁদের মন জয় করতে পেরেছি।’

মানবিক নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন তিনি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দ তাঁর কাছে বড় পাওয়া। বলছিলেন, ‘মানুষের জন্য কিছু করার শিক্ষা আব্বুর কাছ থেকে পেয়েছি। ছোটবেলায় যখন এক রিকশাচালকের মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো সব টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম, তখন আব্বুর চোখে আনন্দাশ্রু দেখেছিলাম।’ কলেজেও কারও বিপদের কথা শুনলে এগিয়ে আসেন তিনি।

সুরাইয়ার এখন লক্ষ্য—পরিবারের সহযোগিতা না পাওয়া মেয়েদের জন্য কিছু করা। পরিবার-সমাজের অসহযোগিতায় যেসব মেধা অঙ্কুরেই হারিয়ে যায়, তাদের জন্য বিনা মূল্যে স্কুলের ব্যবস্থা করতে চান তিনি। যেখানে গান, আবৃত্তি, অভিনয় কিংবা বিতর্কচর্চার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করা হবে।

l হাসান ওয়ালী

মাহমুদুল হাসান
মাহমুদুল হাসান

ক্রিকেটের ভক্ত : মাহমুদুল হাসান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল
ছোটবেলায় বাড়ির সবার অগোচরে ব্যাট, বল, গ্লাভস ব্যাগে ভরে চলে যেতেন স্কুলে। তারপর ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতেন মাঠে। এভাবেই ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সখ্য হয় মাহমুদুল হাসানের।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পাঠ নিচ্ছেন মাহমুদুল হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই জায়গা করে নেন ক্যাম্পাসের ক্রিকেট দলে। ২০১৮ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদালয়কে হারিয়ে সেই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মাহমুদুল। তিনি বলেন, ‘এটিই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কোনো টুর্নামেন্টের আমাদের ক্যাম্পাসের প্রথম জয়।’

জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে মাহমুদুল ভর্তি হন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। খেলেছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে। ‘আমাদের স্কুলের খেলার মাঠ এবং জেলা স্টেডিয়াম পাশাপাশি। মাঠের এক জায়গায় আমরা খেলছি এবং অন্য পাশে বড়রা অনুশীলন করছিলেন। তাঁদের খেলা দেখেই আসলে আমারও খেলার প্রতি আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়,’ বলেন তিনি।

খেলাধুলা ভালোবাসেন এই তরুণ। স্কুল, কলেজে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। শুধু অংশ নিয়েই শেষ হয়নি, পুরস্কারও পেয়েছেন বেশির ভাগ ইভেন্টে। মাহমুদুল বলছিলেন, ‘রিলে দৌড় প্রতিযোগিতায় দলগত পারফরম্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্কুলের এই রিলে দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে পরবর্তী সময়ে ক্রিকেটে দলগত পারফরম্যান্সের বিষয়টি আমাকে সাহায্য করেছে। বোলিংটা ভালো করলেও মাহমুদুল নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

‘শুরুর দিকে পরিবার থেকে খুব একটা সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না। ২০১৪ সালে জামালপুরে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলি মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। সেখানে ৬ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট পাই আমি। এরপর পরিবার থেকে একটু একটু সমর্থন পেতে শুরু করি,’ বললেন মাহমুদুল।

২০১৩-১৪ ন্যাশনাল স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছেন। জামালপুর জেলা দলের হয়ে খেলেছেন ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন রেনেসাঁ ক্লাবের হয়ে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অংশ নিয়েছেন আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে।

এ বছর থেকে করপোরেট লিগে খেলছেন মাহমুদুল। ভবিষ্যতে চাকরির পাশাপাশি খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তাঁর।

l ফজলে রাব্বী