গানের কোনো মানচিত্র নেই: নাজনিন নূর

নাজনিন নূর।
নাজনিন নূর।
>

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা পরিচিতি পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। অনেকে নিজেরাই গান লেখেন, গান করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যাঁরা দুপুর কিংবা রাতে গিটার, গ্লাস আর টেবিল বাজিয়ে গান করেন, তাঁদের মধ্যে প্রায়ই আপনি পেয়ে যাবেন নাজনিন নূরকে। গলা ছেড়ে ‘গান ভালোবেসে গান’ তিনি। পড়েন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষে।

নূর যখন গাইতে শুরু করেন, ‘এলোমেলো আনাগোনা মোটাদাগে সুখ, ট্রাফিকের ভিড়ে ভিতু মনের অসুখ/যত দূরে সরে গিয়ে ভালো থাকা যায়, যত দূরে সরে গিয়ে ভালো থাকা যায়,/তবু বলো প্রেম আর ভালোবাসা এক নয়!/এলোমেলো...এলো...মেলো, এলোমেলো...এলোমেলো...মেলো...’ আশপাশের মানুষগুলো মনের ভেতরটাও কেমন যেন এলোমেলো লাগে! সবাইকে এলোমেলো করে দেওয়া মেয়েটার গান আছে আরও। ঘোর, নাগরিক ভালোবাসা, যোগফল কিংবা বেণীমাধব—সব কটি গানের নাম বন্ধুদের চেনা। গানগুলোর কথাও নূরেরই লেখা।

গান লেখার ভাবনা কীভাবে এল মাথায়? নূর বলেন, ‘কীভাবে শুরু ঠিক মনে নেই। একসময় মনে হতো নিজের কিছু লিখে রাখা দরকার! কাউকে জানাব কিংবা জানাব না, সেটা পরের ব্যাপার। লিখতে মনে চাইত, তাই লিখতাম। শুরুতে গান বলে আলাদা কিছু লিখতে পারতাম না। কিছু হতো কবিতা, আর বেশির ভাগই গদ্য। একসময় সেসব কবিতাই সুর হয়ে কীভাবে কীভাবে যেন গান হয়ে গেল!’

কীভাবে কীভাবে যেন একটা গানের দলেরও অংশ হয়ে গেছেন নাজনিন নূর। দলের নাম—অবান্তর। তবে এই গানের দলে নূর কিন্তু অবান্তর নন। তিনিই ব্যান্ডটির মূল গায়ক। ক্যাম্পাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে অবান্তর এখন ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও পরিচিত হতে শুরু করেছে।

নাজনিন নূর গানের ক্ষেত্রে কোনো মানচিত্র মাথায় আনতে চান না। তিনি মনে করেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সবকিছুই গান, ব্রহ্মাণ্ডের একটাই ভাষা, আর সেটা হলো সংগীত। এটি বর্ণমালায় হয়তো লিখিত নেই, কিন্তু ব্যাপারটা সবার ভেতরেই মিলেমিশে আছে। তাই নিজের কথাগুলো গানের মধ্য দিয়ে বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।

নাজনিন নূরের মতে, ‘কারও আমার গান ভালো লাগে, কেউ আমার লেখা গান গুনগুন করে গায়, একাত্মতা জানান দেয়, সত্যি বলতে এই সমস্ত কিছুই ভালো লাগে। আরেকটা গানের তৃষ্ণা পায়। আবার কারও যখন ভালো লাগে না, তখন ভাবি প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের সঙ্গে হয়তো আমার মনের কথাগুলো মানানসই নয়। হয়তো তাদের জীবনে অন্য কিছু ঘটছে, যা আরও দুর্দান্ত! আমি তখন ওই দুর্দান্তর খোঁজে লেগে যাই। প্রতিটি মানুষ এভাবেই হয়তো প্রতিদিন টেকে নিজের মতো করে।’

আবদুল্লাহ মামুর