ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ ‘মানবিক’ কারণে, বললেন বিদায়ী উপাচার্য

মেয়াদের শেষ দিনে কর্মস্থল ছাড়ছেন আবদুস সোবহান
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান তাঁর মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে যে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেটিকে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত বলেছে।

কিন্তু তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্যের পর বিদায়ী উপাচার্য দাবি করেছেন, তিনি যে নিয়োগ দিয়েছেন সেটি যৌক্তিক এবং তাদের চাকরি না টেকার কোনো কারণ নেই। আর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ‘আমি এই নিয়োগ মানবিক কারণে দিয়েছি।’

আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিনে গেছে। কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আবদুস সোবহান।

আগে থেকেই অনিয়মের কারণে অভিযুক্ত অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ৬ মে তাঁর মেয়াদের শেষ দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৪১ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে অনিয়মের নজির সৃষ্টি করে পুলিশি পাহারায় উপাচার্যের বাসভবন ছাড়েন। এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

ঘটনার দিনেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি তদন্তকাজে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।

বেলা তিনটায় অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান উপাচার্য দপ্তরে আসেন। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিকেল পৌনে চারটায় বিদায়ী উপাচার্য কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩ এর ১২ (৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমি এই নিয়োগ দিয়েছি। এখানে কেউ হয়তো বলার চেষ্টা করছে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছিল। কিন্তু আমি মনে করি, যেখানে সুস্পষ্ট একটা আইন আছে, ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেখানে নিষেধাজ্ঞা আসতে হলে তো ওই আইনটা (অ্যাক্ট) বাতিল হওয়া উচিত আগে।’

উপাচার্য বলেন, ‘নিয়োগ না টেকার কী কারণ আছে আমি বলতে পারব না। এটার সিদ্ধান্ত কারা নেবে আমি জানি না। অ্যাডহকে নিয়োগ তো অনেক হয়েছে। মাস্টাররোলে ৫৪৪ জনের চাকরি তো এখনো টিকে আছে। সুতরাং এটা না টেকার কী কারণ আছে? আমি মনে করি এটা যৌক্তিক এবং আমি নিজ দায়িত্বে এটা দিয়েছি।’

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়োগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, ‘যারা ডিজার্ভ করে তারাই এই নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে যাচ্ছিল, আমি এই নিয়োগ মানবিক কারণে দিয়েছি। তাঁরা অনার্স-মাস্টার্স পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের তৃতীয় শ্রেণির চাকরি পাওয়া আমি খুবই যৌক্তিক মনে করি।’

নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ৪০-৪৫ জন ছাত্রলীগ, এমন আলোচনার প্রসঙ্গে এম আবদুস সোবহান বলেন, ‘কথাটি সত্য নয়। ছাত্রলীগের নেতা হওয়া আর কর্মী হওয়া তো এক নয়। ছাত্রলীগ নেতা, ছাত্রলীগ কর্মী এবং আওয়ামী পরিবারের সন্তান তো একই।’

অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ক্যাম্পাসে আসার সময় তাঁর গাড়ির সঙ্গে টহল পুলিশের একটি গাড়িও আসে। তাঁর আসার আগে থেকেই নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকে প্রশাসন ভবনের আশপাশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিতে উপাচার্য দপ্তরে ঢুকলে তাদের অনেকে প্রশাসন ভবনে ঢুকে পড়েন।

আবদুস সোবহান বের হয়ে আসলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ নিয়োগপ্রাপ্তরা স্লোগান দেন, ‘সোবহান স্যার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ‘সোবহান স্যারের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ক্যাম্পাসে’।
এরপর আবদুস সোবহান গাড়িতে করে বিনোদপুর গেট দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িও ছিল।