ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ছবি: প্রথম আলো
দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ছবি: প্রথম আলো

 ‘আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে পারি?’

তাকিয়ে দেখি দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে। স্কুল ড্রেসের ওপরে সবার পরনে হালকা নীল রঙের টি-শার্ট। হুট করে দেখলে সবাইকে একই রকম মনে হয়। আমি দাঁড়িয়ে আছি ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ’৭১ মিলনায়তনের সামনে। একটু আগে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০১৯-এর চূড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির হাফসা, সাদিয়া ও মাহাদীও অন্যদের মতো ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমার মনে পড়ল, গত বছর এই স্কুলে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমরা একটি কম্পিউটার দিয়েছিলাম।

কয়েকজন উদ্যমী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় এখন স্কুলটি হয়ে উঠেছে আমাদের গ্রামীণ প্রোগ্রামিং জগতের এক অনন্য উদাহরণ। এই স্কুলে এবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি আলাদা বিষয় ছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। শুধু বাগেরহাট নয়, এই প্রতিযোগিতায় আমরা দেখেছি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার আদাবরিয়া ও পুকুরপাড় স্কুলের শিক্ষার্থীদের। চলনবিলের দুর্গম জায়গা থেকে ওরা এসেছে। এসেছে ঝিনাইদহের মহেশখালী উপজেলা থেকে, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে। আর এভাবেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় তৈরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও। এর প্রতিফলন আমরা দেখেছি ফলাফলেও। স্কুল পর্যায়ে শীর্ষ ১০টি দলের ৭টিই ছিল ঢাকার বাইরের, আর কলেজে ঢাকার বাইরের পুরস্কারপ্রাপ্ত দলের সংখ্যা ৫।

প্রোগ্রামিং বা কোডিং দক্ষতা আগামী দিনের জন্য বলতে গেলে একটি আবশ্যিক দক্ষতায় পরিণত হয়েছে। সেটি এ জন্য নয় যে সবাইকে প্রোগ্রামার হতে হবে। প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাধারণভাবে সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠে। তবে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হলো সমস্যাকে নানা দিক থেকে আক্রমণ করতে পারা, একটি বড় সমস্যাকে ভেঙে একাধিক ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সেগুলোর আলাদা সমাধান খুঁজে বের করা, টুকরো সমাধান জোড়া দিয়ে বৃহত্তর সমাধান পাওয়া ইত্যাদি। আর যেহেতু এই প্রতিযোগিতা দলীয়, তারা শেখে ফেলে কীভাবে দলের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়।

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১৩ বছর বয়সে, ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ৭ বছর বয়সে প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি পেয়েছেন। এসবই আসলে বিশ্বব্যাপী স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে যুক্ত করার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। কোডিংকে ছড়িয়ে দেওয়ার এই আয়োজনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরও নানামুখী আয়োজন প্রয়োজন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা সে রকমই একটি আয়োজন। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশের স্কুলগুলোতে স্থাপিত কম্পিউটার ল্যাবগুলো যেন সারা বছর সচল থাকে, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।

সবাই মিলে আমরা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারব আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়।

প্রথম আলো
প্রথম আলো
জাতীয় পর্ব
ভেন্যু: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
তারিখ: ৬ মার্চ ২০২০
জাতীয় পর্যায়ে আমন্ত্রিত দল ১৮০টি (কেন্দ্রীয় অনলাইন প্রতিযোগিতা থেকে ১৪০টি দল এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পর্ব থেকে ২০টি করে মোট ৪০টি দল)।
জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করে স্কুল পর্যায়ের ৭৭টি এবং কলেজ পর্যায়ের ৪৪টি দল বিজয়ী হয় ২২টি দল (স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ১০টি করে মোট ২০টি দল এবং দুই ক্যাটাগরিতে মেয়েদের মধ্যে সেরা ২টি দল)
আয়োজক: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও প্রথম আলো
সহযোগী: দুরন্ত টিভি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চিটাগাং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও লিডিং ইউনিভার্সিটি
প্রস্তুতি পর্বের যত আয়োজন
প্রচারণা ১০০টি স্কুলে
প্রোগ্রামিং আড্ডা ১টি
শিক্ষক কর্মশালা ৩টি
আঞ্চলিক কর্মশালা ৯টি
আঞ্চলিক উৎসব ২টি (চট্টগ্রাম ও সিলেট)
অনলাইন মহড়া প্রতিযোগিতা ২টি অনুশীলন প্রতিযোগিতা ১টি
কেন্দ্রীয় অনলাইন প্রতিযোগিতা ১টি
অংশগ্রহণকারী দল ৭৩০টি
সব আয়োজনে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ২৫ হাজার


লেখক: প্রথম আলো যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টের প্রধান