জাতিসংঘের তদন্ত কমিটিকে আংশিক তথ্য দিল ফেসবুক

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সদস্যের পেজ সংরক্ষণ করে রেখেছে ফেসবুক
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির কাছে অবশেষে তথ্য দিয়েছে ফেসবুক। এর আগে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির প্রধান ফেসবুকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, তথ্য দিতে গড়িমসি করছে ফেসবুক। তাঁর ওই অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেতে শুরু করে। এরপর ফেসবুকের পক্ষ থেকে তথ্য দেওয়ার কথা জানানো হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকের একজন প্রতিনিধি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পেজ ও অ্যাকাউন্টের তথ্য তারা ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম অব মিয়ানমারের (আইআইএমএম) কাছে তুলে দিয়েছেন।

ফেসবুক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যেসব পেজের তথ্য দিয়েছে, সেগুলো মূলত ২০১৮ সালে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এ পেজগুলোর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগ ছিল। তবে এতে কনটেন্ট কী ছিল, ফেসবুক তা প্রকাশ করেনি।

ফেসবুকের প্রতিনিধি বলেন, ‘তদন্তপ্রক্রিয়া সামনে এগোলে আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করব এবং তারা যেহেতু মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত করছে, তাই তাদের সংগতিপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করব।’ রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় আইসিজে গত ২৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের আদেশ দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের দুর্গতির কথা বিশ্ববাসী জানতে পারে ২০১৭ সালের আগস্টে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তখন নির্মূল অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ হত্যা, ব্যাপক হারে ধর্ষণ, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণে বাঁচতে সাত লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় বাংলাদেশে। গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে মিয়ানমার বলেছে, তার বাহিনী পুলিশ পোস্টগুলোয় আক্রমণকারী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান পরিচালনা করেছে।

মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আইআইএমএম প্রতিষ্ঠা করে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, ফেসবুক মিয়ানমারের সহিংসা উসকে দিতে ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালে ফেসবুক জানায়, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসংশ্লিষ্ট ১৮টি অ্যাকাউন্ট ও ৫২টি পেজ বন্ধ করেছে। বন্ধ হওয়া পেজের মধ্যে ছিল দেশটির প্রধান কমান্ডারের পেজটিও। ফেসবুক এসব তথ্য সংরক্ষণ করে রেখেছে।

জাতিসংঘের আইআইএমএমের প্রধান নিকোলাস কোমজিয়ান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের কাছে এমন সব উপাদান আছে, যা গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং সম্ভাবনাময়। কিন্তু বছরব্যাপী আলোচনার পরেও তারা কোনো তথ্য দেয়নি। ফেসবুক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা তা রাখছে না। গতকাল প্রথম কোনো তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধের আংশিক তথ্য ফেসবুক দিয়েছে।’ তিনি ফেসবুকের কাছে পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

ফেসবুক এ মাসে গাম্বিয়ার তথ্য পাওয়ার একটি আরজি আটকে দেয়। মিয়ানমার সরকারকে কাঠগড়ায় টেনে এনেছে গাম্বিয়া। তারা আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছে। তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের ফেসবুক যোগাযোগ ও পোস্টের তথ্য চেয়েছে।

নিকোলাস কোমজিয়ান অভিযোগ করেন, ‘এ পর্যন্ত জাতিসংঘের মেকানিজম ফেসবুকের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পায়নি। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা চালিয়েই যাচ্ছে ফেসবুক। আশা করব, ফেসবুকের কাছ থেকে মেকানিজম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাবে।’

গাম্বিয়ার দাবি, ফেসবুক কর্তৃক আটকে দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখে নিকোলাস কোমজিয়ান এ মন্তব্য করেন। গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনা ও পুলিশের বিভিন্ন পোস্ট ও যোগাযোগের তথ্য চাওয়া হয়। ফেসবুক ওই তথ্য দিতে অনীহা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট কোর্টে ওই আবেদন বাতিল করার দাবি করে।

ফেসবুকের ভাষ্য, আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের আইনের পরিপন্থী। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সেবাগুলো ব্যবহারকারীর যোগাযোগের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না। গত সপ্তাহে ফেসবুক জানায়, তারা গাম্বিয়ার অনুরোধ রাখতে বাধ্য নয়, তবে তারা আইআইএমএমের সঙ্গে কাজ করবে।

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিপদ থেকে সুরক্ষায় আইসিজে গত ২৩ জানুয়ারি সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের প্রতি চার দফা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো মেনে চলা মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক। তারা আইসিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না। আইসিজের আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।