টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসে প্রশ্ন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা

সারাক্ষণ বাসায় থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের মানসিক অবসাদ দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী, তা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছেন শিক্ষক শাহনাজ কবীর সঙ্গে।

শাহনাজ কবীর

ক্লাসরুমে সরাসরি শিক্ষার যে ব্যবস্থা, এর কোনো বিকল্প নেই। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে না। তাদের মনে যেসব প্রশ্ন তৈরি হয়, তা অনলাইন ক্লাসে সেভাবে প্রকাশ করতে পারে না।

আবার টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, সেখানেও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। মৌলিক বিষয়গুলো যখন শিক্ষক পড়ান, তখন কৌতূহলী শিক্ষার্থীরা ভালো করে বোঝার জন্য প্রশ্ন করেন, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সে সুযোগ থাকে না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, তারা তাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় বন্ধুদের পাচ্ছে না। পড়াশোনায় সেভাবে তাদের মন বসে না।

করোনার কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। শহর ও গ্রামের পরিবেশ ভিন্ন। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে করোনা মোকাবিলায় গ্রাম ও শহরের একই রকম ব্যবস্থা নিলে তা সুফল বয়ে আনবে না। দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থী সমানভাবে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না।

অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা বাচ্চাদের কাছে মুঠোফোন দেওয়া নিরাপদ মনে করেন না। আবার এমন অনেক পরিবারও আছে, যাদের একটাই মুঠোফোন, সেটিও স্মার্টফোন নয়। আবার বাচ্চাদের জন্য মুঠোফোনে ইন্টারনেট সংযোগের বা আলাদাভাবে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সামর্থ্য সব অভিভাবকের নেই।

সুতরাং অনলাইনে যতই ক্লাসের ব্যবস্থা করা হোক না কেন, সেটা সবার উপকারে আসে না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা উচিত। করোনার এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের উচিত মাঝেমধ্যে ফোনে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া। অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা যাতে কিছুটা কম দামে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য সরকার যদি মুঠোফোন সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করে, তাহলে ভালো হবে।

শাহনাজ কবীর, প্রধান শিক্ষক, এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ