‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’ পালন করল হাজারতম দিন পূর্তির অনুষ্ঠান

‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’-এর হাজারতম দিন পূর্তির অনুষ্ঠান হয়ে গেল দেশজুড়ে
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বিনা মূল্যের প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’–এর হাজারতম দিন পূর্তির অনুষ্ঠান হয়ে গেল দেশজুড়ে। দেশের সব জেলার পাশাপাশি পৃথিবীর ৫০টি দেশে সংগঠনটির উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণার্থীরা একযোগে দিনটি পালন করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার কচিকাঁচার আসর মিলনায়তনে গতকাল বুধবার এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ইকবাল বাহার জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মমিন ইউ ইসলাম অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ছিলেন দেশের আট বিভাগ থেকে আসা ১৪ তরুণ, যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ১৪০ জন উদ্যোক্তা মিলিতভাবে ১৪ জনের প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকার পণ্য ছয় মাসের জন্য বাকিতে দিয়েছেন উদ্যোক্তা স্বপ্নপূরণের জন্য।

দিবসটি কেন্দ্র করে ঢাকার আয়োজনে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন সংগঠনটির উপদেষ্টা পর্ষদ, দেশের টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, সাংবাদিক, নিজের বলার মতো একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের সফল কয়েকজন উদ্যোক্তা, ঢাকা জেলার ভলান্টিয়ার টিমসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। দেশের বিভিন্ন জেলার আয়োজনে ডিসি, ইউএনও, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সমাজের গণমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।

প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চার লাখ তরুণকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ টানা ১ হাজার দিন দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার। গতকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনলাইন প্রশিক্ষণের এক হাজারতম দিন পূর্ণ হয়েছে। ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ, ১০ বিষয়ে স্কিলস শেখানো ও মূল্যবোধসংক্রান্ত অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্ল্যাটফর্ম। ১৬৪ তরুণের এই সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজের উদ্যোগ ২ বছর ৯ মাস আগে শুরু হয়। এরই মধ্য তাঁরা সাত হাজারের বেশি মানুষকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করেছেন। একটি দিনের জন্যও বন্ধ ছিল না তাঁদের এই প্রশিক্ষণ।

ইকবাল বাহার বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ও ৫০টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মোট ৪ লাখ তরুণ-তরুণীকে ১১টি ব্যাচের মাধ্যমে ৩৬০টি কনটেন্ট দিয়ে টানা ৯০ দিন করে বিনা মূল্যে অর্থাৎ কোনো ফি ছাড়া উদ্যোক্তাবিষয়ক, মূল্যবোধ, ভলান্টিয়ারিং ও ১০টি স্কিলস নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মিটআপের মধ্য দিয়ে চলছে আর অফলাইন কার্যক্রমও, গত আড়াই বছরে সারা দেশে ও বিদেশে প্রায় ১ হাজার ২০০ অনলাইন ও অফলাইন মিটআপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের সঙ্গে শুরু হয়েছে ‘সাপ্তাহিক অনলাইন হাট’। এ হাট প্রতি মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা চলে। করোনার ভয়াবহ সময়ে যখন সবাই তাঁদের ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত, অনেকের বিক্রি প্রায় বন্ধ তখন ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প’ গ্রুপের মাধ্যমে সুযোগ তৈরি হয় দুই লাখ মানুষের। এ সুযোগে ক্রেতারা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। ‘আমরাই ক্রেতা আমরাই বিক্রেতা’ স্লোগানে বেশ সাড়া ফেলেছে এই অনলাইন হাট। ১৬টি অনলাইন হাটে কয়েক কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এর জন্য এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তাদের মার্কেটিং বাবদ ১ টাকাও খরচ করতে হয়নি।

নিজের বলার মতো একটা গল্প উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি করে যাচ্ছে মানবিক কাজও। অসহায় গৃহহীনকে ঘর বানিয়ে দেওয়া, কিছু গরিব তরুণকে আর্থিক মূলধন দিয়ে সহায়তা করা, ৩ হাজার ৫০০ বন্যাকবলিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, করোনাকালে আট হাজার অসহায় মানুষের পাশে থাকা, ২০ হাজার ব্যাগ রক্ত প্রদান করা, সারা দেশে ৩৫ হাজার বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা, ১৫ হাজার এতিম-অসহায় শিশু ও বৃদ্ধকে এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা, ৪ হাজার শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা করাসহ নানা কাজ করা হয়েছে।