পর্যালোচনা চান ১৪ হাজার ৬৯২ শিক্ষার্থী, বেশি কষ্টে ৩৯৬ জন

ফাইল ছবি

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ১৪ হাজার ৬৯২ জন পরীক্ষার্থী ফল পর্যালোচনার জন্য আবেদন করেছেন। তবে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও এইচএসসিতে তা না পাওয়া ৩৯৬ জন পরীক্ষার্থীর কষ্টটা একটু বেশি।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয় ‘ম্যাপিং’ (বিষয়ভিত্তিক নম্বর গণনা) করে ফল তৈরির কারণে ৩৯৬ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। কিন্তু আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়েও ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। এর পরিবর্তে জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হয়। মাদ্রাসা, কারিগরিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। তাঁদের মধ্যে ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।

এরপরও ফল নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে পর্যালোচনার (রিভিউ) সুযোগ দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। আজ আজ শনিবার আবেদনের শেষ সময়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ১১টি বোর্ডে ১৪ হাজার ৬৯২ জন পরীক্ষার্থী ফল পর্যালোচনার জন্য আবেদন করেছেন। যেহেতু এবার পরীক্ষা হয়নি, তাই উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। আবেদন করা পরীক্ষার্থীদের ফল তৈরিতে কোনো ভুলত্রুটি ছিল কি না, সেটি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, সেটি সংশোধন করা হবে। না হলে আগের ফলই থাকবে।

তবে এর মধ্যেই বরিশাল বোর্ড নিজ থেকেই অন্তত দুজন পরীক্ষার্থীর ফল সংশোধন করেছে। তাঁদের একজন সুমী খানম। তিনি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে প্রথম ঘোষিত ফলে পান জিপিএ-৪ দশমিক ৭৫। তিনি এসএসসিতে বিজ্ঞান শাখায় থাকলেও এইচএসসিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তন করে মানবিক শাখা নেন। ৩০ জানুয়ারি ফল প্রকাশের পর দেখতে পান, বিষয় ম্যাপিংয়ের যে নীতিমালার কথা বলা হয়েছে, তাঁর ফল সে অনুযায়ী হয়নি। কারণ, বিভাগ (গ্রুপ) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ফল তৈরিতে শাখা পরিবর্তনের পদ্ধতি অনুসরণ না করে বিজ্ঞান শাখার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ জেএসসির গণিত ও বিজ্ঞানের প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিষয়ের পরিবর্তে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের নম্বর বিবেচনা করার কথা।

বিষয়টি সুমীর এক স্বজন বোর্ড কর্তৃপক্ষসহ গণমাধ্যমকেও অবহিত করেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে বরিশাল বোর্ড কর্তৃপক্ষ ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ফল সংশোধন করে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানালেন, ইতিমধ্যে দুজনের ফল সংশোধন করা হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওই ৩৯৬ জন পরীক্ষার্থী কেন এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি, সে বিষয়টি তাঁরাও ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করেছেন। মূলত বিষয় ‘ম্যাপিংয়ের’ কারণেই এটি হয়েছে। এরপরও কেউ পর্যালোচনার আবেদন করে থাকলে সেটি পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সাধারণভাবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিভাগ (গ্রুপ) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ফল উন্নয়নের জন্য এবং আংশিক বিষয়ের (এক বা একাধিক বিষয়) পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও ওপরের নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।