বদলে গেছে পড়ানোর ধরন, খুশি শিক্ষার্থীরা

নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়টি মাথা রেখেই লেখা হয়েছে বই।

  • মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে নতুন শিক্ষাক্রম।

  • প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম আগামী ঈদের আগে শুরু হচ্ছে না।

  • নতুন পদ্ধতি নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক প্রশাসন এখনো একমত হতে পারেনি।

  • আগামী বছর পুরোদমে চালুর আগে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের পরামর্শ।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলেছবি: প্রথম আলো

সাজানো-গোছানো শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষার্থীরা তখন শিক্ষকের অপেক্ষায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর শিক্ষক এলেন। প্রথমেই তিনি শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে ভাগ (গ্রুপ) করা যায়, এমনভাবে বসার নির্দেশনা দিলেন। বসার ব্যবস্থাটি এমনভাবে করা হলো, যাতে দলগত কাজের বিষয়টি সহজ হয়। ক্লাসে তখন সশরীর উপস্থিত ১৪ জন শিক্ষার্থী। অনলাইনে তখন আরও ২৭ জন শিক্ষার্থী যুক্ত।

নতুন শিক্ষাক্রমে হাতে–কলমে শিখছে শিক্ষার্থীরা। যেমন গত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শীতের প্রকৃতি নিয়ে গান, কবিতা, গল্প, আঁকাআঁকির মধ্যে যে যা পারে, সেটা করতে দিয়েছিলেন। দেখা যায় কেউ কেউ ছবি এঁকে শীতের প্রকৃতিকে বুঝিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বেশ আনন্দসহকারে শিখছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নেওয়া ক্লাসের এমন চিত্র দেখা গেল। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়ের ওপর ক্লাস নিচ্ছিলেন অশ্রুজিত রায়। তিনি প্রযুক্তিবিষয়ক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং তা কীভাবে সমাধান করা যায়, তা পড়াচ্ছিলেন।

পরিচয় দিয়ে শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পেছনের সারিতে বসে ছিলেন এই প্রতিবেদক। প্রথম আলোর সাংবাদিক হওয়ায় অশ্রুজিত রায় তখন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলেন, এই মুহূর্তে অনলাইনে প্রথম আলোর প্রতিবেদন কীভাবে দেখা যাবে? শিক্ষার্থীরা জবাব দিল, গুগলে সার্চ করে প্রতিবেদন পড়া যাবে। তিনি তখন একজন শিক্ষার্থীকে কাছে ডেকে নিয়ে অনলাইনে প্রথম আলোর প্রতিবেদন বের করতে বললেন। ছাত্রটি তখন গুগলে ইংরেজিতে ‘প্রথম আলো’ লেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম আলো ওয়েবসাইটটি শ্রেণিকক্ষে স্থাপিত বড় স্ক্রিনে ভেসে উঠল।

বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অশ্রুজিত রায় বললেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে এমনভাবে শেখানো হচ্ছে, যার অভিজ্ঞতা তার সারা জীবন কাজে লাগবে।

শুধু এই বিদ্যালয় নয়, নতুন শিক্ষাক্রম দেশের মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি। শেখানোর নতুন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা খুশি। শিক্ষকেরাও বলছেন, পদ্ধতিটি ভালো। কিন্তু পুরোমাত্রায় চালু করার আগে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোপুরি চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে। নতুন এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন এবং পরীক্ষাব্যবস্থা আমূল বদলে যাচ্ছে। পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে।

কী আছে নতুন বইয়ে

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণিসহ মাধ্যমিকে ১০টি বিষয়ে ১০টি বই থাকবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (যার যার ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। আর নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য আটটি বিষয় ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে সব বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা বই পাবে না। কিছু বই ‘শিক্ষক গাইডের’ আলোকে পড়ানো হবে।

শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁরাই মূলত এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইগুলো লিখেছেন। এনসিটিবি জানিয়েছে, সময় কম থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণির বইগুলো সারা বছরের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য প্রথমে চার মাসের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে বই তৈরি করে সেগুলো ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি অংশ দেওয়া হবে আরও দুই ভাগে (চার মাস পরপর)। নতুন বইগুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে।

এত দিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আনন্দ পাঠ (বাংলা দ্রুতপঠন), বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত এবং চারুপাঠের মাধ্যমে মূলত বাংলা বিষয়টি পড়ানো হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলায় একটি বই থাকবে। বইয়ের নাম ‘বাংলা’। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রমিত বাংলা ভাষায় ভালোভাবে যোগাযোগ করতে শেখে, সেটি মাথায় রেখে বইটি লেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যাতে ভাষা–দক্ষতা বাড়াতে পারে, সে জন্য কিছু কৌশল ও কাজও যুক্ত করা হয়েছে।

চার মাসের জন্য লেখা বাংলা বইয়ে ‘প্রমিত ভাষায় কথা বলি’ বোঝাতে গিয়ে ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত রোকনুজ্জামান খানের ‘চিঠি বিলি’ ছড়াটি যুক্ত করা হয়েছে। ‘বুঝে পড়ি’ অংশে রয়েছে মমতাজউদদদীন আহমদের সুখী মানুষ নাটক। ‘অভিজ্ঞতার কথা লিখি’ অংশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আমার দেখা নয়াচীন–এর সংক্ষেপিত অংশ যুক্ত করা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণিসহ মাধ্যমিকে ১০টি বিষয়ে ১০টি বই থাকবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (যার যার ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। আর নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য আটটি বিষয় ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে সব বিষয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা বই পাবে না। কিছু বই ‘শিক্ষক গাইডের’ আলোকে পড়ানো হবে।

‘কবিতা বুঝি’ অংশে রয়েছে পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি। রোজনামচা বা ডায়েরি লেখা শেখানোর জন্য বইয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলির অংশবিশেষ ব্যবহার করা হয়েছে। জেনে বুঝে কাজ করা শেখাতে গিয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। আলোচনা করতে শেখানোর জন্য হুমায়ূন আহমেদের ‘পুতুল’ গল্পটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে এত দিন কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা পড়ানো হতো। এখন ‘জীবন ও জীবিকা’ নামে নতুন বইয়ে অনেক কিছুই হাতে-কলমে শেখানোর বিষয়বস্তু রয়েছে। যেমন এই বইয়ের ‘কাজের মাঝে আনন্দ’ অংশে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের বিছানা পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন বাস্তব বিষয় শেখানোর কথা রয়েছে। এগুলোর জন্য বিভিন্ন অনুশীলনীর মাধ্যমে শেখানোর কথা রয়েছে।

খুশি শিক্ষার্থীরা

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম সব শিক্ষার্থীর জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যেমন: রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ৬০ জন শিক্ষার্থীকে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম চালুর জন্য বিদ্যালয়টির ১১ জন শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীর বয়স ১২ বছর না হওয়ায় সবাইকে করোনার টিকা দেওয়া যায়নি। তাই যেসব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদেরই সশরীর ক্লাস হচ্ছে। বাকিদের অনলাইনে যুক্ত করে ক্লাস হচ্ছে। সশরীর ও অনলাইন—এই মিশ্র ব্যবস্থায় পাঠদান হচ্ছে।

শিক্ষার্থী রাহাত আহমেদ বলছিল, ‘আগে যে রকমভাবে ক্লাস হতো, তার চেয়ে এখন গুরুত্ব দিয়ে আমাদের পড়ানো হয়। নতুন ক্লাসে অনেক কিছুই নতুন।’

ফাহিম আলদিন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলল, বাড়িতে দৈনন্দিন কাজে কী কী সমস্যা হয় এবং কীভাবে সমাধান করতে হয়, তা–ও শেখানো হয়।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ৬০ জন শিক্ষার্থীকে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৪৯ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। তখন শিল্প ও সংস্কৃতির ক্লাস চলছিল।

‘কবিতা বুঝি’ অংশে রয়েছে পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘আমার বাড়ি’ কবিতাটি। রোজনামচা বা ডায়েরি লেখা শেখানোর জন্য বইয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলির অংশবিশেষ ব্যবহার করা হয়েছে। জেনে বুঝে কাজ করা শেখাতে গিয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। আলোচনা করতে শেখানোর জন্য হুমায়ূন আহমেদের ‘পুতুল’ গল্পটি ব্যবহার করা হয়েছে।

শিক্ষক সজল সূত্রধর বলেন, আট বছর ধরে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চারুকলা, সমাজ, বিজ্ঞান পড়িয়ে আসছিলেন। আগে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মুখস্থ করার জন্য পরামর্শ দিতেন। নতুন শিক্ষাক্রমে হাতে–কলমে শিখছে শিক্ষার্থীরা। যেমন গত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শীতের প্রকৃতি নিয়ে গান, কবিতা, গল্প, আঁকাআঁকির মধ্যে যে যা পারে, সেটা করতে দিয়েছিলেন। দেখা যায় কেউ কেউ ছবি এঁকে শীতের প্রকৃতিকে বুঝিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বেশ আনন্দসহকারে শিখছে।

নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক চালুর তালিকায় থাকা ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। কিন্তু এখনো নতুন শিক্ষাক্রম ঠিকমতো শুরু করতে পারেনি এই বিদ্যালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, সব শিক্ষার্থীকে সশরীর বিদ্যালয়ে আনা ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন।

তবে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সারা দেশ থেকে যে তথ্য পাচ্ছেন, তাতে সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে শেখানোর পদ্ধতিতে খুশির কথা জানাচ্ছে।

প্রাথমিকের জটিলতা কাটেনি

প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম চালু নিয়ে এখনো কিছুটা জটিলতা রয়েছে। প্রথমত নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের যোগসূত্রটি কীভাবে হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক শুরু হয়ে গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমের শেখানোর কিছু বিষয়বস্তু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত নয়। আবার প্রথম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলক চালুর জন্য এখন পর্যন্ত বই প্রণয়নে বাজেট অনুমোদন হয়নি। বই লেখক কমিটি এবং কর্মপরিকল্পনাও অনুমোদন করেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে নতুন শিক্ষাক্রমকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকের সমন্বিত শিক্ষাক্রম বলা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রাথমিকে যদি মাধ্যমিকের মতো পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে জটিলতা বাড়বে। কারণ, শিক্ষার্থীদের নিচের স্তরে নতুন পদ্ধতিতে না শেখানো গেলে হঠাৎ করে মাধ্যমিকে চালু করলে তা সমন্বয় করতে অসুবিধা হবে। এ জন্য এখনই সমস্যাগুলো সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বাজেট, বই লেখক কমিটি এবং কর্মপরিকল্পনার অনুমোদন হয়নি। ১০ মার্চের মধ্যে অনুমোদন হলেও আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে তা শুরু করতে রোজার ঈদের পর হয়ে যেতে পারে।

শিক্ষকদের তৈরি করতে হবে

নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। যদিও নবম শ্রেণির পরিবর্তে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাজন নিয়ে বিতর্ক আছে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, দলগত কাজ (গ্রুপ ওয়ার্ক), কুইজ, খেলাধুলা, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের একজন গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অশ্রুজিত রায় প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে সবারই উপকার হবে। পরীক্ষামূলকভাবে চালুর জন্য তাঁদের যেমন পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তেমনি আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সব শিক্ষককে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলো মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেন]