বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# পোরগোলা গ্রামটি শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে। এ গ্রামেরই এক শিক্ষিত, বিত্তবান ও প্রভাবশালী যুবক রাশেদ। তিনি গ্রামটিকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় এলাকাবাসীর মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে। রাশেদের অবিরত প্রচেষ্টায় গ্রামবাসী নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন।
প্রশ্ন: ক. কত সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়?
খ. ভাস্কো দা গামা ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতির আলোকে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় কিসের উদ্ভব হয়েছিল? এ সম্পর্কে তোমার দাও।
ঘ. ‘রাশেদের মতো উন্নয়নকর্মী ও সংস্কারবাদী ব্যক্তিদের কর্মতত্পরতার ফলেই ভারতের স্বাধীনতার পথ সুগম হয়েছে’ উক্তিটির বিশ্লেষণ করো।
উত্তর- ক.
১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উত্তর-খ.
পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন। ফলে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোপের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ভারতবর্ষ বিশ্ব বাণিজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ভাস্কো দা গামা এ কারণে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
উত্তর-গ.
উদ্দীপকে রাশেদ গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামবাসীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ঠিক তেমনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজসংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ইংরেজদের সহযোগিতায় দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটে। হিন্দুসমাজ থেকেই সতীদাহের মতো প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমত তৈরি হয়। শিক্ষা ও জাগরণের ফলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে।
উত্তর-ঘ.
‘রাশেদের মতো সংস্কারবাদী ব্যক্তিদের কর্মতত্পরতার ফলেই ভারতের স্বাধীনতার পথ সুগম হয়েছে’ উদ্দীপকের এ উক্তিটির বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, রাশেদ যেমন গ্রামবাসীকে নারীশিক্ষা, মানবাধিকার ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে সচেতন করেন, তেমনি তত্কালীন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ সংস্কারপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকায় ভারতবাসী জেগে ওঠে। ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। শিক্ষার সংস্পর্শে এসে মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটে। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বিধবা বিবাহের পক্ষে মত তৈরি হয়। মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়।
ফলে তাঁরা সমাজের অনাচার নিয়ে যেমন আত্মসমালোচনা করেছেন, তেমনি শাসকদের অবিচারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর প্রমুখ অবাধে মুক্ত জ্ঞানচর্চার ধারা তৈরি করেন। বাঙালির এই নবজাগরণ কলকাতা মহানগরে ঘটলেও এর পরোক্ষ প্রভাব সারা বাংলাতেই পড়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই নবজাগরণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা দেয় বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন। এ সময় অনেক তরুণ সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঝুঁকে পড়েন। মুসলমানদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে স্বতন্ত্র মুসলিম লীগ। স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনসহ বিভিন্ন নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৪৭ সালে ভারববর্ষ স্বাধীন হয়ে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
সহকারী শিক্ষক
পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়