বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

 সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর: অধ্যায়-২
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

.
.

ক. কখন মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়?
খ. মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে কেন বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়?
গ. মানচিত্রে ‘B’ চিহ্নিত স্থানের গুরুত্ব সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধরো।
ঘ. ‘A’ চিহ্নিত স্থানের সেক্টরটি অন্যান্য সেক্টর থেকে ব্যতিক্রমী কেন? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর-ক
মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল।
উত্তর-খ
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি সেক্টরে নিযুক্ত করা হয় একজন সেক্টর কমান্ডার। এ ছাড়া প্রতিটি সেক্টর বেশ কয়েকটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত ছিল।
উত্তর-গ
মানচিত্রে ‘B’ চিহ্নিত স্থানটি হলো মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টর। ৮ নম্বর সেক্টরের আওতায় ছিল সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা। ফরিদপুরের অধিকাংশ এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত এলাকা। এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (আগস্ট পর্যন্ত) এবং মেজর এম এ মঞ্জুর (আগস্ট-ডিসেম্বর)। এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল বেনাপোল, যশোর। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এই সেক্টরের আওতাধীন যশোর শত্রুমুক্ত হয়। এ কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে স্থানটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। প্রথম এই স্থানের বিজয় অর্জনের মাধ্যমেই শুরু হয় স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশিদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার শুভসূচনা। এরই ধারাবাহিকতায় উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য। অমরা অর্জন করি লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। যশোর জেলা থেকে শত্রুমুক্ত হওয়ার মাত্র ১০ দিন পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সমগ্র বাংলাদেশ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তাই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাসংগ্রামের মাইলফলক হিসেবে ‘B’ চিহ্নিত স্থানটির গুরুত্ব অনেক বেশি।
উত্তর-ঘ
‘A’ চিহ্নিত স্থানটি হলো মুক্তিযুদ্ধের ১০ নম্বর সেক্টর। ১১টি সেক্টরের মধ্যে কেবল ১০ নম্বর সেক্টরটি ছিল ব্যতিক্রম। এই সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-কমান্ডো, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম ও চালনা। এই সেক্টরে কোনো নিয়মিত কমান্ডার ছিলেন না। নিয়মিত কমান্ডার না থাকলেও পাকিস্তান নৌবাহিনীর আটজন বাঙালি কর্মকর্তা ১০ নম্বর সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। আর এই ১০ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল নৌ-কমান্ডের অধীনে। এই সেক্টর সমুদ্রসীমায় যাতে বহিঃশত্রু ঢুকতে না পারে, তা প্রতিহত করার জন্য দায়িত্ব পালন করে। এই সেক্টর দেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করার দায়িত্ব পালন করে। তাঁদের অতন্দ্র প্রহরা আর দক্ষ রণকৌশলের ফলে বহিঃশত্রু দেশের সীমানার মধ্যে ঢুকতে পারেনি। নৌপথে নৌ-কমান্ডোরা বহিঃশত্রুর হামলা ঠেকাতে সদা হুঁশিয়ার থেকেছেন। ফলে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়নি বাংলাদেশকে। নৌপথে নৌ-কমান্ডোরা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ অভিযান পরিচালনা করেন। মাত্র এক দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০টি আর মংলা বন্দরে ৫০টি জাহাজ ধ্বংস করেন। মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোদের এই সাহসী পদক্ষেপ দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাই A চিহ্নিত স্থানের সেক্টরটি ছিল অন্যান্য সেক্টর থেকে ব্যতিক্রম।
সহকারী শিক্ষক
পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পিরোজপুর