বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ১১

দৃশ্যকল্প-১: রাতুল গত কয়েক বছর ধরে জাপানে থাকেন।

দৃশ্যকল্প-২: মিতুল দেশেই একটি চালের কল পরিচালনা করেন।

দৃশ্যকল্প-৩: ইতালির নাগরিক টমাস বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে কাজ করেন।

ক. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কী?

খ. মাথাপিছু আয় কী? ব্যাখ্যা করো।

গ. দৃশ্যকল্প-৩-এর ঘটনা কোন অর্থনৈতিক সূচকে গণনা করা হয়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২-এর আয় কি একই ধরনের অর্থনৈতিক সূচকে গণনা করা সম্ভব? তোমার মতামত দাও।

উত্তর

ক. কোনো দেশের জাতীয় আয়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic Growth) বলে।

খ. কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের মোট জাতীয় আয়কে সে দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু জাতীয় আয় বা মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। মাথাপিছু আয় হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকদের গড় আয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকদের

মোট জাতীয় আয়

মাথাপিছু আয় =

মোট জনসংখ্যা

মাথাপিছু আয় একটি দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে। সর্বোপরি মাথাপিছু আয় সেদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে নির্দেশ করে।

গ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-৩-এর ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকের মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপিকে গণনা করা হয়।

মোট দেশজ উত্পাদন (Gross Domestic Product) বা GDP হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে, সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের অভ্যন্তরে বা ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে বসবাসরত সব জনগণের উত্পাদিত চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের অর্থমূল্যের সমষ্টি। এতে উক্ত সীমানার মধ্যে বসবাসকারী সব নাগরিক ও বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত চূড়ান্ত পর্যায়ের দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের মূল্য অন্তর্ভুক্ত হবে। কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে কোনো বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উত্পাদিত দ্রব্য ও সেবার অর্থমূল্য তথা আয় সে দেশের জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে দেশের বাইরে বসবাসরত কোনো নাগরিকের আয় এই সূচকে গণনা করা হবে না।

প্রশ্নোক্ত দৃশ্যকল্প-৩ অনুসারে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে ইতালির নাগরিক টমাস উচ্চ বেতনের বিনিময়ে সেবা দান করছেন। বাংলাদেশের নাগরিক না হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের ভৌগোলিক সীমার অভ্যন্তরে একটি প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের মাধ্যমে আয় করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর উত্পাদিত আয় তাঁর কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও ইতালির জিডিপিতে তা গণনা করা হবে না। তবে যেহেতু সে ইতালির নাগরিক, তাই বিদেশে কাজ করেও তাঁর অর্জিত আয় তাঁর দেশের মোট জাতীয় উত্পাদনে অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মি. টমাসের সেবার অর্থমূল্য বাংলাদেশের জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।

ঘ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প ১ ও দৃশ্যকল্প-২-এর আয় একই দেশের মোট জাতীয় উত্পাদনে (GNP) গণনা করা সম্ভব। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক অর্থবছরে কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বা ভূমির ওপর সে দেশের মোট শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্য ও সেবা উত্পাদিত হয়, তার আর্থিক মূল্যকে ঐ দেশের মোট জাতীয় উত্পাদন বলে। অন্য অর্থে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের জনগণ মোট যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উত্পাদন করে, তার আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় উত্পাদন (Gross National Product) বা GNP বলে। জাতীয় উত্পাদনের মধ্যে কোনো দেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ও কর্মরত বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন বা আয় অন্তর্ভুক্ত না হলেও দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশে বসবাসরত দেশি নাগরিক, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন বা আয় অন্তর্ভুক্ত হবে।

উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ অনুসারে রাতুল সাহেব জাপানে বসবাসরত একজন প্রবাসী। জাপানে তাঁর উত্পাদিত দ্রব্য বা সেবার অর্থমূল্য তথা তাঁর আয় জাপানের জিডিপির পাশাপাশি এদেশের মোট জাতীয় উত্পাদন তথা GNP-তে অন্তর্ভুক্ত হবে। দেশের বাইরে অবস্থান করেও সে দেশের একজন নাগরিক হওয়ায় তাঁর পাঠানো রেমিট্যান্স তাঁর দেশের মোট জাতীয় উত্পাদনের একটি অংশ। পক্ষান্তরে, দৃশ্যকল্প-২-এ মিতুল সাহেব দেশের ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে একটি চালের কল পরিচালনা করেন। চালের কল থেকে উত্পাদিত দ্রব্যের অর্থমূল্য তাঁর দেশের জিডিপিতে (GDP) অন্তর্ভুক্ত হবে। একই সঙ্গে মিতুল সাহেব দৃশ্যকল্প-১-এর রাতুল সাহেবের মতোই একজন নাগরিক হওয়ায় তাঁর আয়ও এদেশের GNP-তে গণনা করা হবে।