শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পড়ানো হলে কোচিং-প্রাইভেটের প্রয়োজন হতো না: কুইন

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে এবার সারা দেশে চারজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। এরা হলো বিদ্যালয় পর্যায়ে (মাধ্যমিক) ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুপমা শারমীন অনন্যা, কলেজ পর্যায়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুইন, মাদ্রাসায় চট্টগ্রামের ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ ফয়সাল আহমদ এবং কারিগরি শিক্ষায় দেশসেরা হয়েছে লালমনিরহাটের সরকারি আদিতমারী গিরিজা শংকর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী মো. রাগীব ইয়াসির রোহান। তাদের মধ্যে কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী কুইন কথা বলেছে প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ।

কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুইন
ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশসেরা কলেজশিক্ষার্থীর পুরস্কার পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পাওয়ায় তোমাকে আবারও অভিনন্দন।

কুইন: অনেক ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কোন কোন যোগ্যতায় তুমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছ?

কুইন: পরীক্ষার ফল, উপস্থিতির হার, সংগীত দক্ষতা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, নৈতিক দৃঢ়তা, খেলাধুলা ইত্যাদি বিভিন্ন গুণ বিবেচনা করে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। আমি এখন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি। এর আগে রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছি। সেখানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতেই প্রথম হয়েছিলাম। আমি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। গানে ২০১৫ সালে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছি। আমার লেখা দুটি কবিতার বই আছে। এর মধ্যে একটি আমার ও আমার যমজ বোনের যৌথভাবে লেখা। স্কুলের ছাত্র সংসদ (স্টুডেন্ট কেবিনেট) নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলাম। আমার প্রতিষ্ঠিত অনলাইনভিত্তিক একটি সংগঠন আছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সঙ্গে সংস্কৃতি বিনিময় করছি ফেসবুকের মাধ্যমে। সম্প্রতি আমরা আরও একটি সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছি। শিশুবান্ধব ও মানবিক পৃথিবী গড়ার জন্য কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গেও কাজ করি। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সম্পৃক্তি আছি। বন্ধুসভার সঙ্গে আছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমাদের স্কুলে কেমন ক্লাস হতো?

কুইন: ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত কোনো কোচিংয়ে পড়তে হয়নি। এরপর বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসের ঘাটতি থাকায় সিলেবাস শেষ হতো না। তখন কোচিং করতে হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমার কলেজে এখন কেমন ক্লাস হয়?

কুইন: কলেজে শুধু একটি বিষয়ে কোচিং করতে হয়েছে। তবে কলেজে পর্যাপ্তসংখ্যক ক্লাস পাই না, অর্থাৎ যত ক্লাসের প্রয়োজন তা হয় না। শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পড়ানো হলে কোচিং-প্রাইভেটের প্রয়োজন হতো না। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষকদের বড় অংশ কোচিং-প্রাইভেটে যতটা শ্রম দেন, সেটি যদি ক্লাসে দিতেন, তাহলে আমাদের কোচিং করতে হতো না।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছে থেকে শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষার্থীর পুরস্কার নিচ্ছে কুইন
ছবি: খালেদ সরকার

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমার অভিজ্ঞতায় আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলতে চাও?

কুইন: অবশ্যই বলতে চাই। আমি মনে করি শিক্ষকেরা কোচিং-প্রাইভেটে যতটা শ্রম দেন, সেটি যদি ক্লাসে দিতে তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ভালো হতো। আমার অনেক গরিব বন্ধু আছে, যারা কোচিং-প্রাইভেট পড়তে পারে না। অনেকের গাইড বই কেনারও সামর্থ্য নেই। এ জন্য অনেক সময় পরীক্ষায় খারাপ ফল করেছে। আর সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হলেও এগুলো আসলে মুখস্থনির্ভর। শিক্ষায় আরও বেশি ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজন। আর মানবিক ও নৈতিক গুণাবলির শিক্ষার ওপর আরও বেশি জোর দেওয়া দরকার।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তুমি ব্যক্তিপর্যায়ে কাকে আদর্শ মনে করো?

কুইন: কোনো একজন মানুষকে নয়। বিভিন্ন কাজে বিভিন্নজনকে অনুসরণ করি। বড় বড় মানুষের আত্মজীবনী পড়ি। তবে আমার কাজে মা অনেক অনুপ্রেরণা দেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সামনের দিনে তোমরাই তো দেশকে নেতৃত্ব দেবে, তো তুমি দেশটিকে কেমন দেখতে চাও?

কুইন: আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কোনো পথশিশু থাকবে না। কোনো পথশিশু ছেঁড়া জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে না। আমি শিশুবান্ধব বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে শিশুরা আরও মুক্তচিন্তার অধিকারী হবে এবং মানুষ আরও বেশি মানবিক হবে। আর দেশটি হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অনেকেই স্বপ্নের কথা বলতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি হওয়ার কথা বলে। তোমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী?

কুইন: আমি মনে করি, স্বপ্নকে কয়েকটি পেশার নামে আটকে রাখা ঠিক নয়। আমি মনে করি, এগুলো লক্ষ্য হতে পারে, স্বপ্ন নয়। আমি স্বপ্ন দেখি আরও মানবিক ও শিশুবান্ধব পৃথিবীর। তবে হ্যাঁ যদি পেশাগত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কী হতে চাই, তাহলে ডাক্তার হতে চাই। সামাজিক কাজ করতে চাই, বিশেষত শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তোমাকে ধন্যবাদ

কুইন: আপনাকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।