স্কুল খোলার আগে চাই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি

রাশেদা কে চৌধূরী, সৈয়দ গোলাম ফারুক, মোহাম্মদ সহিদুল্লা, মো: ফসিউল্লাহ

করোনার সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না। কিন্তু পুনরায় যখন খুলবে, তখন সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা করা দরকার। আর স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ শিক্ষার অন্যান্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দরকার বিনিয়োগ। এ জন্য সরকারের উচিত শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সেটি কাজে লাগানো।

প্রথম আলো ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘কোভিড-১৯ সময়ে শিশুদের নিরাপদে স্কুলে ফেরা: প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে শিক্ষাবিষয়ক সরকারের নীতনির্ধারক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, পুনরায় বিদ্যালয় খোলাও দরকার। কিন্তু এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না। কারণ, সবার আগে জীবন। জীবিত থাকলে শিক্ষা হবে, প্রতিষ্ঠিতও হওয়া যাবে। তাই বাংলাদেশে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, বন্ধ থাক। যখন দেখা যাবে বড় ঝুঁকিতে পড়তে হবে না, তখন খোলা যেতে পারে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর পুনরায় স্কুল খোলার আগেই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যেদিন নিরাপদে স্কুলে নেওয়া যাবে, সেদিন উৎসব করা উচিত। এ জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে হবে। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদেরও মাথায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে প্রস্তুতি নিতে হবে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া অনেক শিশু বিদ্যালয়ে আসতে চাইবে না। তাদের আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসবের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রেও ‘প্রণোদনা প্যাকেজ’ প্রয়োজন এবং সেই প্যাকেজ যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে কাজে লাগানো হয়।

শিক্ষার ধারাবাহিকতার জন্য করোনার বন্ধেও শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে ক্লাস প্রচারের তথ্য তুলে ধরেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. ফসিউল্লাহ। তিনি বলেন, বিদ্যালয় এমন সময়ে খোলা হবে না, যখন ঝুঁকি থাকবে। বিদ্যালয় তখনই খোলা হবে, যখন কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
করোনার সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়া বাস্তবতা মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, করোনা একধরনের সুযোগও সৃষ্টি করে দিয়েছে, যদি সেটা কাজে লাগানো যায়। যেমন অনলাইনে ক্লাস। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুযোগ পাওয়ামাত্রই আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা ১৫ দিনের নোটিশে নেওয়া যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের চার কোটি শিক্ষার্থী হলো দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। দুই দিন ধরে দেশে করোনায় সংক্রমণের হার ১২ শতাংশের কিছু বেশি। মানে হার কমছে। তবে এই হার ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর পুনরায় যখন বিদ্যালয় খুলবে, তখন মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য মোহিত কামাল বলেন, বিদ্যালয় খুলতে হলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নিয়ে খুলতে হবে। যেখানে ‘রেড জোন’, সেখানে স্কুল খোলা যাবে না।

করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় নানাবিধ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের উপপরিচালক (ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন) সৈয়দ মতিউল আহসান বলেন, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো স্কুলগুলো খুলবে, তখন যেন স্কুলগুলো নিরাপদ হয়।
হলিক্রস কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী লাবণ্য প্রজ্ঞা জানায়, যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তখন আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ইকবাল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোমেন রায়হান, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রমুখ।

গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোকপাত করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।