৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম’ছবি: দীপু মালাকার

সরকারি সব চাকরিতে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের ব্যানারে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

আয়োজকদের দাবি, সরকারি সব চাকরিতে ১০ নয়, ২০ নয়, ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল ও সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বিশেষ কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে এই কোটা ব্যবস্থা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পদগুলো বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পদে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।  

আয়োজকেরা জানান, সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ১০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর জন্য যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, তার বিরোধিতা করে এই সমাবেশ। যাঁদের রক্তের ওপর দিয়ে এ দেশের মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা রচিত হয়েছে, তাঁদের সম্মান করে জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়েছেন। কিন্তু কূটকৌশলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান, অসম্মান এবং হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে, যা গভীর ষড়যন্ত্র।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিলে মানুষ হাসাহাসি করে, লাঞ্ছিত হতে হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সাধারণ মানুষের কাছে খেপিয়ে তোলা হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক অহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অংশ নেন ।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো


অহিদুল ইসলাম এক সপ্তাহের মধ্যে সব শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না করা হলে কঠোর আন্দোলন ও উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।


সংগঠনের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, সরকারি চাকরিতে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল ও সংরক্ষণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষায়িত মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল নির্মাণ এবং তাঁদের কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা ও দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন। রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং তাদের বংশধরদের সরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগে অযোগ্য ঘোষণা এবং চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সব ধরনের অপপ্রচার বন্ধ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্ব-ঘোষিত রাজাকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলাসহ সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের বয়সসীমা ৩৫ করা।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের উদ্দেশে একটি পদযাত্রা বের করেন আয়োজকেরা।