একজন মান্না, একটা সীমাহীন গল্পের আসল নায়ক

চিত্রনায়ক মান্না

চিত্রনায়ক মান্না এখনো আবেগের নাম। বিশেষ দিনে প্রিয় এই নায়ককে দেশের সাধারণ ভক্তদের মতো স্মরণ করেন দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষেরা। আজ ছিল মান্নার চলে যাওয়ার ১৪ বছর। প্রিয় নায়ককে স্মরণ করলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষেরা।

অঞ্জনা, অভিনয়শিল্পী
তোমার প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য কিংবদন্তি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক, যে তার মেধা–মনন ও অভিনয়দক্ষতা দিয়ে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করেছিল। সে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের সবার অন্যতম মধ্যমণি প্রিয় নায়ক মান্না। বাংলা চলচ্চিত্রে তোমার অবদান অমর হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। বিনম্র শ্রদ্ধা, হে গুণী।

আজ ছিল মান্নার চলে যাওয়ার ১৪ বছর
ছবি: ফেসবুক থেকে

ওমর সানী, অভিনয়শিল্পী
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটি দুঃখজনক দিন, এই দিনে বাংলাদেশের দর্শক ও চলচ্চিত্র হারিয়েছে একজন তুমুল জনপ্রিয় সুপারস্টার নায়ককে, আজ সুপারস্টার মান্নার ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী, আমার পরিবার ও ওমর সানী ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন, আমিন।

সকালেই মান্নাকে স্মরণ করেছেন ওমর সানী
ছবি: ফেসবুক থেকে
শাকিবের পোস্ট করা ছবিতে শাকিব ও মান্না
ছবি: ফেসবুক থেকে

শাকিব খান, অভিনয়শিল্পী
চলচ্চিত্রের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন মান্না ভাই। একেবারেই আনপ্যারালাল। তাঁর প্রতিটি কাজে ছিল আলাদা সিগনেচার। ইন্ডাস্ট্রির ভালোর জন্য মৃত্যুর আগপর্যন্ত কাজ করে গেছেন। অশ্লীলতা যখন চরমে, সমসাময়িক অনেকেই চলচ্চিত্র থেকে সরে গিয়েছিলেন, তখনো হাল ছাড়েননি মান্না ভাই। দুঃসময়ে চলচ্চিত্রকে আগলে রেখেছিলেন। সে সময় উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র। দর্শকদের করেছিলেন হলমুখী। আমার সৌভাগ্য, স্ট্রাগল পিরিয়ডে কয়েকটি চলচ্চিত্রে এই মানুষের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে পেরেছি। ভীষণ মিস করি প্রিয় মান্না ভাইকে। ১৪ বছর দৃশ্যমান না থেকেও মান্না ভাই সব সময় আছেন আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্থানে। ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। প্রিয় মান্না ভাই, যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন।

মান্না ও শাবনূর
ছবি: ফেসবুক থেকে

শাবনূর, অভিনয়শিল্পী
আমার পরম গুরু খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার এহতেশাম হক, যাঁকে আমি আদর করে ‘দাদু’ বলে ডাকি, যাঁর হাত ধরে আমার চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু, তাঁর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমার অতি প্রিয় সহকর্মী মহানায়ক মান্না ভাইয়ের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীও আজ। এই দুজন মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

আবদুল্লাহ জহির বাবু, চিত্রনাট্যকার
কী বলব, এই লোকটাকে নিয়ে? কোন বিষয় নিয়ে বলব? আমার প্রথম দেখা তাঁর সঙ্গে আলমগীর পিকচার্সে, মুভি মোগল জাহাঙ্গীর খান আঙ্কেলের অফিসে, ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে। শেষ দেখা শাকিব খানের চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যাওয়ার আগে, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে। যেদিন আমি আর শাকিব খান ঢাকায় ফিরে এলাম, তার পরদিন সকালে তাঁকে হারালাম। না, নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর আমি তাঁকে দেখতে যাইনি। সাহসে কুলায়নি। এমন ক্যারিয়ারপাগল নায়ক আর আসবেন না। ক্যারিয়ারের জন্য সংসারধর্ম তিনি একরকম ত্যাগ করেছিলেন। প্রচণ্ড ইনফরমেটিভ ছিলেন। কোন প্রযোজকের গাড়ি এফডিসিতে কোথায় পার্ক করা, সে খবর তাঁর কাছে থাকত। কোন প্রযোজক মুভি শুরু করছেন, কে ডিরেক্টর হতে পারেন, নায়িকা কে, প্রযোজকের দুর্বলতা কী—সব জানতেন। ফিল্ম পলিটিকস একটা অন্য রূপে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মান্না ভাই আমার বন্ধু, আমার বড় ভাই, আমার উপদেষ্টা। আজও মাঝরাতে ফোন বাজলে চমকে উঠি, মান্না ভাই না তো। কত হাজার রাত একসঙ্গে কাটিয়েছি, ওয়িম্পি, সোনারগাঁ হোটেল বা আমার বাসায়। কতও রাত আমার রাতজাগা ছোট বোন মান্না ভাইয়ের জন্য খিচুড়ি রেঁধেছে, সেসব ইতিহাস এখনো স্মৃতিতে অম্লান। ওপারে ভালো থাকুন, মান্না ভাই।

ছবিটি পোস্ট করে মান্নাকে স্মরণ করেছেন শাহনূর
ছবি: ফেসবুক থেকে

ইমন, অভিনয়শিল্পী
বিনম্র শ্রদ্ধা, মান্না ভাই। চলচ্চিত্রে কখনো আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু আপনার ভক্ত হয়ে থাকব সারা জীবন। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন, আমিন।

নিরব হোসেন, অভিনয়শিল্পী
সালটা ২০০৮, ওয়ান্ডারল্যান্ডের গল্প এটি। মান্না ভাই আর নিপুণ সেখানে একটি ছবির শুটিং করছিলেন। আমি আর প্রভা সেখানে ম্যাগাজিন আনন্দ আলোর ফটোশুট করছিলাম। হঠাৎ ক্যামেরাম্যান এসে বললেন, ‘মান্না ভাই আপনাকে ডাকছেন।’ মান্না ভাই তখন তুমুল জনপ্রিয় নায়ক। আমি তখন টিভি মিডিয়াতে কাজ করছি। সেই আমাকেই ডাকছেন মান্না ভাই। বিষয়টি আমার দারুণ লাগল। নিজের কাজটা শেষ করে মান্না ভাইয়ের কাছে যাই। দেখা করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রথম কথা ছিল, ‘নিরব, তুমি সিনেমা করো না কেন?’ আমি বললাম, ভাই, করব। তিনি বললেন, ‘শুধু “করব করব” না বলে এখনই শুরু করে দাও।’ মান্না ভাইয়ের সঙ্গেই ওইটাই আমার প্রথম ও শেষ দেখা। এর ১৫-১৬ দিন পরই অকালবিদায় নেন তিনি। মান্না ভাইয়ের সঙ্গে সেদিন ১০ মিনিটের মতো আলাপে ফিল করেছিলাম, সিনেমার জন্য কতটা অন্তঃপ্রাণ ছিলেন তিনি। কতটা মনেপ্রাণে চাইতেন সিনেমার উন্নয়ন। নতুনেরা কাজে আসুক, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সমৃদ্ধ হোক—এসব কতটা চাইতেন তিনি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাঁর অকালপ্রয়াণে কতটা ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা ফিল্মের প্রত্যেকেই হয়তো অনুভব করে থাকেন।

আসিফের পোস্ট করা ভিডিও গানের পোস্টারে মান্না ও পূর্নিমা
ছবি: ফেসবুক থেকে

আসিফ আকবর, কণ্ঠশিল্পী
বাংলা সিনেমার সুপারস্টার মান্না ভাই। আমার সৌভাগ্য, জীবনের প্রথম সিনেমায় গাওয়া গানটি মান্না ভাইয়ের লিপে গিয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে অনেক আবেগ–ইতিহাস মিশে আছে। একদিন অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব নিবেদিতপ্রাণ এই জননায়কের সান্নিধ্য পাওয়ার গল্প। মান্না ভাই পর্দার হিরোর চেয়ে মানবতার গল্পের জাঁদরেল সেনাপতি ছিলেন। তিনি আজ নেই, প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। একজন মান্না, একটা সীমাহীন গল্পের আসল নায়ক। আল্লাহ আপনার সব গুনাহ মাফ করে দিন, এই দোয়া করি, মান্না ভাই। অভিভাবক না থাকলে যা হয়, সেটা আমরা বর্তমান এফডিসি–কেন্দ্রিক ফিল্মি কুচকাওয়াজে দেখেই যাচ্ছি। আপনি শুধু নায়ক নন, মান্না ভাই। আপনি পরিশ্রমী নবাগতদের আদর্শ। মানুষের ভালোবাসাই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে। আপনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি…ভালোবাসা অবিরাম।

ফেসবুকে বাপ্পী ছবিটি পোস্ট করেছেন
ছবি: ফেসবুক থেকে

বাপ্পী চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী
আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে, আজকের এই দিনে পুরো বাংলাদেশকে কাঁদিয়েছিলেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে, সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় বসে কেউ এভাবে হুট করে চলে যায়? তারপরও বিধির বিধান হিসেবে সবাই মেনে নিতে বাধ্য। আপনি নেই বলে, আপনার অনেক দর্শক আর হলে আসেন না। আপনি নেই বলে, আপনাকে দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়া অনেক পাগল ভক্ত এখনো চোখের পানি ফেলেন। আপনি নেই বলে হয়তো বাংলা চলচ্চিত্রের মানুষদের একই সুতায় গাঁথার মানুষের অভাব। আপনি নেই বলে আজ অনেক কিছুরই সহজ সমাধান হয় না। আপনি নেই বলে আপনার প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধাভরে আপনাকে স্মরণ করছি, মান্না ভাই। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভালো রাখুন।