
‘দেখেছি একতারা-হাতে চলেছে গানের ধারা বেয়ে,/ মনের মানুষকে সন্ধান করবার/ গভীর নির্জন পথে।/ কবি আমি ওদের দলে—/আমি ব্রাত্য, আমি মন্ত্রহীন।’
১৮৯০ সালে জমিদারি দেখাশোনার কাজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সে সময় তাঁর পরিচয় হয় সেখানকার বাউলদের সঙ্গে। বাউল দর্শনের প্রতি মুগ্ধতায় কবি লেখেন এই কবিতাটি।
বিশ্বকবির বাউল অঙ্গের গান নিয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় যৌথভাবে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল শিল্পকলা একাডেমী, ইউনেসকো ঢাকা ও ইনস্টিটিউট অব কালচার অ্যান্ড থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট (আইসিটিডি)। ‘রবি ঠাকুরের বাউল মন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানটি ছিল শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বের আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাউল দর্শন ও সংগীতকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংস্কৃতিসচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বললেন, সাম্প্রদায়িকতা ও ভেদবুদ্ধি বিরুদ্ধে লালনের অবস্থান রবীন্দ্রনাথকে প্রভাবিত করেছিল। তিনি ভবিষ্যতে বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ইউনেসকোর সহযোগিতা কামনা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউনেসকোর দূত বিয়াট্রিস কালডুন। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী।
পরে লাইসা আহমেদ রবীন্দ্রনাথের বাউল অঙ্গের দুটি গান—‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’ ও ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গেয়ে শোনান। আজিজুর রহমান, সেমন্তী মঞ্জরী ও অভিক দেব পরিবেশন করেন ‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা’, ‘আমি কান পেতে রই’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’, ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ’, ‘আমার মন মানে না’, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানগুলো।
গানের পর শিল্পী তামান্না রহমান ও তাঁর দল ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।