ক্লোজআপের তাঁরা তিনজন
‘সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলায় নেব সখি তোমার কানের সোনা সখি গো...।’ মনের আনন্দে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই গানটি গাইছেন তাঁরা তিনজন—প্রত্যেকেই উঠতি সংগীতশিল্পী। সোমবার। তখন বিকেল। ওঁরা সবাই চলেছেন শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের মগবাজারের স্টুডিওতে। সঙ্গে বিশাল লটবহর। অনেক গান, অনেক কথা শেষ হয়; কিন্তু গুলশান থেকে মগবাজারের পথটুকু যেন আর শেষই হয় না। ফলে আরও গান, কথা—আড্ডা তুঙ্গে ওঠে।এতক্ষণে নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে, এই তিন উঠতি সংগীতশিল্পী কারা, কারা আসর গুলজার করছেন চলতি পথে?তাঁদের নাম টুটুল, লায়লা ও সোহাগ। চিনলেন না তো। এখনই চিনে ফেলবেন—তাঁরা এনটিভিতে প্রচারিত সংগীতবিষয়ক রিয়ালিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এর সেরা তিনে স্থান পাওয়া তিন শিল্পী। অনুষ্ঠানটির প্রযোজক আলফ্রেড খোকন। ১১ মে নির্ধারিত হবে তাঁদের মধ্য থেকে কে হবেন ক্লোজআপ ওয়ান সেরা তারকা। তবে এ মুহূর্তে সেসব ভাবনা শিকেয় তুলে আড্ডাকেই জমকালো করে তুললেন সবাই। ‘গানের আসরে আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু বাস্তবজীবনে তো বন্ধু। সেটি ভুলে গেলে চলবে কেন।’—ফটাফট বললেন টুটুল। জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা টুটুলের এ কথা বলার কারণও আছে। কম দিন তো নয়, প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আড়াই মাস তাঁরা একসঙ্গে ক্যাম্পে রয়েছেন। এখন এটিই তাঁদের পরিবার। তাই তো টুটুলকে বলতে শোনা গেল, ক্যাম্পে নিজের জন্মদিন পালনের গল্প।‘তখন টপ টেন চলছে। এর মধ্যে আমার জন্মদিন এল—৩ মার্চ। মজার ব্যাপার হলো, আমার জন্মদিনের কথা সে সময় আমারই মনে ছিল না! তো, ৩ মার্চ রাতে ক্যাম্পে ফিরতেই দেখি, বাবু ভাই (তিনি টপ টেনে ছিলেন) নানা ছলছুতায় আমাকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরে ১২টা বাজার পর আমাকে নিয়ে তিনি আমার ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকে আমি তো অবাক, আমার জন্মদিন উপলক্ষে এত আয়োজন! চারজন ছেলে ও ছয়জন মেয়ে মিলিয়ে আমাদের পরিবার। ওদের কাণ্ডকীর্তি দেখে আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল সেদিন।’ এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল টুটুলের। তবে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে বসতে পারেননি পরীক্ষায়। কিন্তু সামনে অবশ্যই পরীক্ষা দেবেন—দুই চোখে ভালো শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে জানালেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে লিখতে অনুরোধ করলেন আরেকটি তথ্য, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। আমি কৃষকের ছেলে এই কথাটিও একটু লিখবেন, প্লিজ।’টুটুলের কথার রেশ ধরে এর মধ্যে লায়লা বললেন, ‘ও যেমন কৃষকের ছেলে, আমিও তেমনি বাউলের মেয়ে। আমার বাবা শফিকুল মৃধা একজন বাউলশিল্পী। তাঁর কাছেই আমার সংগীতে হাতেখড়ি—এ নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই।’ সংগীতশিল্পী বাবার মেয়ে গর্ব করবেন, এটাই স্বাভাবিক; বিশেষত তিনি যখন এ প্রতিযোগিতার সেরা তিনজনের একজন। এবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সামনে ক্লোজআপ ওয়ান হতে কি পারবেন?‘দয়াল যদি চায় তাহলে পারব।’—কণ্ঠে বিনয় নিয়ে মরমি সুরে যেন কথা বললেন বাউলকন্যা লায়লা। তাঁর বাড়ি নাটোরের বনপাড়ার মহিষভাঙ্গা গ্রামে। এ গ্রাম থেকেই পাস করেছেন উচ্চমাধ্যমিক। তবে প্রতিযোগিতার কারণে তাঁরও এবার স্নাতক সম্মান (অনার্স) শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া হয়নি। এ নিয়ে তেমন আক্ষেপও নেই লায়লার। বললেন, ‘অনার্সে তো ভর্তি হবই। কিন্তু এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে পরিচিতি ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, তার দাম তো অমূল্য।’ এতক্ষণে মুখ খুললেন, সেরা তিনের আরেকজন সোহাগ। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। তিনি প্রতিযোগিতার রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন দুবাইয়ে বসে। এ প্রতিযোগিতার জন্যই ছয় বছরের প্রবাসজীবন এবং নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানিকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। বললেন, ‘গানের টানে দেশে ফিরেছি। পড়ালেখা তেমনভাবে করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে গান করতাম। মাঝখানে দুবাইয়ে যখন ছিলাম, বেঁচে থাকার জন্য নানা রকম কাজ করতে হয়েছে। ওখানে গানবাজনার সুযোগ তেমন ছিল না। ক্লোজআপ আমার গলায় আবার গান ফিরিয়ে দিয়েছে। এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছি, পেয়েছিও অনেক। এখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবার নতুন করে পড়ালেখা শুরু করব, নতুনভাবে গান শিখব...কত স্বপ্ন—আমার আর কিছু বলার নেই।’ক্লোজআপের এই তিন উঠতি শিল্পীর কথায় সময় কম পার হয়নি—গুলশান টু মালিবাগের দূরত্ব এখন অনেক কমে এসেছে।