খেলাঘরের জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু

স্থাপনা শিল্পের একটি দৃশ্য
স্থাপনা শিল্পের একটি দৃশ্য

শিল্পকলা একাডেমির মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই মিলল আলো-আঁধারির স্থাপনা শিল্পকর্ম। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি। ছোট ছোট ফ্রেমে রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আলোকচিত্র। এসব দেখে মিলনায়তনে প্রবেশকালেও দেখা গেল মন ভালো করার মতো দৃশ্য। গাঁদা ফুলের মাঝে মঙ্গলপ্রদীপের উষ্ণতা। আর মঞ্চে তখন গীতিআলেখ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের বিজয়ের সময়কাল তুলে ধরল খেলাঘরের শিশু-কিশোররা।

উদ্বোধনী বক্তৃতা দিচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
উদ্বোধনী বক্তৃতা দিচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর আয়োজিত তিন দিনের জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল খেলাঘরের শিল্পীদের মনোজ্ঞ গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশনা। ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’- গানটির তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করে তারা। এর পরই শোনা যায় ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতার দৃপ্ত আবৃত্তি। নৃত্যশিল্পীরা নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন স্বাধীনতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবি। এভাবে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানের তালে নেচে শিল্পীরা অভ্যাগতদের স্মরণ করিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধের বেদনাময় দিনগুলো। সবশেষে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে কান্না-হাসিতে বিজয়ের দিনটি স্মরণ করিয়ে দেন। এ সময় কানে বাজছিল বেদনা মধুর গান ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’।
গীতিনৃত্যনাট্যের পর মঞ্চে আসেন অতিথিরা। মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, পলি খালেদ ও প্রবীর সাহা। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ। আলোচনাপর্বের আগে অতিথিদের লাল স্কার্ফ পরিয়ে বরণ করে নেয় খেলাঘরের শিশুশিল্পীরা।

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ

জন্মের পর খেলাঘর ৬৪ বছর পার করেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ খেলাঘরের বয়স ৬৪। এই সংগঠনকে ৬৪ বার অভিনন্দন জানাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই সংগঠন দীর্ঘদিন কাজ করছে, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কিছুদিন আগে পাকিস্তান বলেছে, একাত্তরে কোনো গণহত্যা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থানে আজও দাঁড়ালে গণহত্যার হাহাকার শোনা যায়। সূর্য উঠলেও কেউ যদি বলে ওঠেনি, তা কি বিশ্বাস করা যায়? আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। যত দিন না পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে তত দিন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ খেলাঘরের শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা জন্মগ্রহণ করেই স্বাধীন দেশের বুকে নিশ্বাস নিয়েছ। আমরা জন্মেই পরাধীনতা বুকে নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে নিশ্বাস নিয়েছি। তোমরা আজীবন স্বাধীনতার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে যাবে।’
উদ্বোধনের পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নাচ-গান-আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, খেলাঘর গাজীপুর জেলা কমিটি, খেলাঘর কাউখালী আঞ্চলিক কমিটির শিল্পীরা।
দেশব্যাপী সাড়ে ছয় শতাধিকেরও বেশি খেলাঘরের শাখা আছে। এসব শাখা থেকে উত্সবের অন্যতম বিষয় হলো শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। সারা দেশের ৫৬টি জেলা থেকে আগত শিশু-কিশোররা এই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। প্রতিটি জেলা থেকে বাছাইকৃত একজন প্রতিযোগী উত্সবের দ্বিতীয় দিন ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। প্রতিযোগীরা ছড়া গান, দেশের গান, লোকসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আবৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ে প্রতিযোগিতা করবে। এ ছাড়াও এ উত্সবে থাকছে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারা দেশের খেলাঘরের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
১৯৫২ সালে জন্ম নেওয়া খেলাঘর এ বছর পা রেখেছে ৬৫ বছরে। উত্সবের শেষ দিন শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।