গারফিল্ড-স্টোন লুকোচুরি

স্পাইডারম্যান
স্পাইডারম্যান

স্পাইডারম্যানের হাতে মার! ভাগ্য ভালো একটুর জন্য বেঁচে গেছে সেই বেরসিক সাংবাদিক৷ খেপে গিয়ে মাকড়সা-মানব যদি বিচ্ছিরি জাল ছুড়ে দিত তাঁর দিকে, কী হতো তখন! কিন্তু স্পাইডারম্যান খেপলেন কেন? পিটার পার্কার নিজেও তো একজন সাংবাদিক৷ জ্ঞাতি ভাইয়ের ওপর ​িকসের এত রাগ তাঁর?সমস্যা হলো একটা বেমক্কা প্রশ্নে৷ সপ্তাহ কয়েক আগে লন্ডনে অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান টু-এর প্রিমিয়ারে হাজির হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু গারফিল্ড৷ টবি ম্যাগুয়ার অবসর নেওয়ার পর রুপালি পর্দায় স্পাইডারম্যানের ভূমিকা এখন গারফিল্ডেরই কাঁধে৷ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া, ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা সেই গারফিল্ডকে সেদিন প্রিমিয়ারে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করছিলেন, ‘আচ্ছা এমা স্টোনের...’
না, প্রশ্নটা শেষই করতে পারেন​িন সেই সাংবাদিক৷ তার আগেই রীতিমতো ভিসুবিয়াস-ফুজিয়ামার মতো গর্জে ওঠেন গারফিল্ড, ‘আপনি কী বলতে চাইছেন? আপনি কিন্তু আমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে একটা অনুমান করতে চাইছেন? আমার জীবন কিন্তু কোনো পাবলিক প্রপার্টি নয়৷’
এমন নিরীহ প্রশ্নে গারফিল্ডের চটে যাওয়ার কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়, অনেক দিন ধরেই প্রেম নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চলা ইঁদুর-বিড়ালের খেলাটা চালিয়ে যাওয়া৷ গারফিল্ড তো আর বলিউডের গানের ভক্ত নন৷ আর তাই ‘পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া’র আপ্তবাক্যেও বিশ্বাস নেই৷ কিংবা রবীন্দ্রনাথের ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’র বাণীও তাঁর কাছে পৌঁছায়নি৷
প্রেমের চাঁদের আলো গোপন সিন্দুকে কি আর পুরে রাখা যায়! ২০১১ সাল থেকেই গারফিল্ড আর এমা স্টোন যে প্রেম করছেন, এই খবর চাউর হয়েছে সেই কবেই৷ কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, দুজনে এখনো এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে আছেন৷ এখন পর্যন্ত দুজনের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি এই সম্পর্কের কথা৷ অথচ স্টোনের জন্যই শ্যানন উডওয়ার্ডকে দেওয়া ‘ওয়ার্ড’ ভাঙতে হয়েছে৷ ভেঙেছেন উডওয়ার্ডের সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্কের বালুকাবেলার ঘর৷
২০১০ সালের অক্টোবরে পরিচালক মার্ক ওয়েব যখন জানালেন, নতুন স্পাইডারম্যান হিসেবে তিনি গারফিল্ডকে নিচ্ছেন, আর স্পাইডারম্যানের প্রেমিকা গোয়েন স্ট্যাসির ভূমিকায় স্টোনকে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল-কেন? পাকা জহু​ির ওয়েব একনজর দেখেই বুঝেছিলেন, পর্দায় এই দুজনের রসায়ন জমবে দারুণ! ওয়েব জহু​ির না হয়ে জ্যোতিষী হলে বুঝতেন, দুজনের রসায়ন পর্দার বাইরেও জমবে বেশ!

জমবে মানে, এরই মধ্যে জমে গেছে, ডিপ ফ্রিজের বরফের মতো৷ সমস্যা এক জায়গাতেই-দুজনের কেউই তা স্বীকার করছেন না৷ অথচ দুজন দুজনের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকছেন৷ দুজনের চোখের ভাষাতেই বলাবলি হচ্ছে মনের সব কথা৷ বিহ্বল হাসিতে, স্ফুরিত অধরে, নিভৃত স্বপনে ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠছে৷ হৃদয়ের শতদল টলমল করছে৷

কিন্তু কেন এই লুকোচুরি? অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে৷ এর একটা তো অবশ্যই হলিউডের শোর বাজারে সম্পর্কগুলো না টেকার কারণ, এ নিয়ে মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের অশেষ কৌতূহল৷ সব সময় নজরদারির আত​িশ কাচের নিচে থাকলে অস্বস্তির গুমোট বাতাস তো বইবেই৷ একটা ভুল বা পা হড়কানোও

নজর এড়াবে না৷ যেমন এড়ায়নি রবার্ট প্যাটিনসন আর ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের বেলায়৷

কিন্তু সত্যি বলতে কি, এ-ই করে মিডিয়ার কৌতূহল কি দমিয়ে রাখা যাচ্ছে? নাকি লেখালেখি হচ্ছে আরও বিস্তর?

এখানেই আসছে লুকোচুরির দ্বিতীয় তত্ত্ব৷ যেটি বলছে, ইচ্ছে করেই কৌতূহল জিইয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন দুজনে৷ এই খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো, কখনোই সরাসরি স্বীকার করবে না তুমি প্রেম করছ; বরং রহস্যের বাতাবরণ তৈরি করে রাখো, যেমন ভক্তদের কৌতূহলের পারদ দিনকে দিন চড়তেই থাকে৷ এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম কিছু জিজ্ঞেস করলে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলো, যেগুলো খুব রোমান্টিক শোনায়৷ তবে সাবধান! শব্দ চয়নে যেন ইঙ্গিত থাকে প্রেমের ব্যাপারটির, কিন্তু সেটি পরিষ্কার না হয়৷

গত সপ্তাহে ‘গুড মরনিং আমেরিকা’য় স্টোনের বলা কথাগুলোই ধরুন, ‘ও সর্বকালের সেরা জীবিত অভিনেতাদের একজন তো অবশ্যই৷ ওর সঙ্গে কাজ করা স্বপ্নের মতো৷ মানুষ হিসেবেও ও অসাধারণ৷ আমি ওকে খুব ভালোবাসি৷’ যেন এই ‘আই লাভ হিম ভেরি মাচ’ কথাটা এখন আপনি কীভাবে নিচ্ছেন, সেটার দায় একান্তই আপনার!

কিংবা ভোগ সাময়িকীকে স্টোনের বলা এই কথাই ধরুন, ‘ও আমার জন্য অবিশ্বাস্য রকমের গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ৷’ আর এর জবাবে গারফিল্ডের বলা, ‘আমি আমার সৌভাগ্যের তারাটাকে ধন্যবাদ দিই যে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি৷’

নিন্দুকেরা তাই বলছেন, হলিউডে প্রেম কীভাবে করতে হয়, সেটা যেন স্টোন-গারফিল্ডের কাছ থেকেই সবাই শেখে!

রাজীব হাসান

হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে