চৈতালির চৈতন্যোদয়

যাত্রাগান যে শুধু নিছক বিনোদন নয়, বরং বৈচিত্র্যময় একটি শিল্পমাধ্যম এবং লোকশিক্ষার বাহন, এমন চিন্তাভাবনা থেকেই চৈতালী অপেরা প্রযোজনা শুরু করেছে। আশুলিয়ার বলিভদ্র আনন্দ মেলার যাত্রার প্যান্ডেলে গানবাজনা হচ্ছে চৈতালী অপেরার। দলে রয়েছেন সময়ের বাছা বাছা কলাকুশলী। সেলিম রেজা-মুক্তি চক্রবর্তী জুটির অভিনয়সহ নায়িকা শিল্পী রেজার অমিয়মধুর সংগীত পরিবেশন, কুশলী অভিনেতা হেমকান্তি সেনের দাপুটে সংলাপ প্রক্ষেপণে যেন জাদুই রয়েছে। যাঁরা একবার পালা দেখেছেন, তাঁরা পুনরায় আসবেনই।

এই দলের পালা দেখেছেন এমন কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা হয় সোমবার বলিভদ্র প্যান্ডেলে। তাঁরা সবাই স্বীকার করেছেন, চৈতালীতে পরিবর্তন এসেছে। মানবী দেবী, মিলন মালা, নিহত গোলাপ এই তিন পালা দেখে সাভারের পারভীন দম্পতি বলেন, ‘শুধু পরিবর্তন নয়, চৈতালীর চৈতন্যোদয় হয়েছে। বহুমাত্রিক ছন্দের নৃত্যগীত আর সুরেলা অভিনয় দর্শক পছন্দ করেছেন।’

যাত্রার দর্শক মহাখুশি এবারের পালা দেখে। লোকজ আঙ্গিকের পালা সম্ভারের সঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সব পালাতেই একটা আলাদা ব্যঞ্জনা তৈরি হচ্ছে। রাত একটার কিছুক্ষণ পরই প্যান্ডেলে প্রবেশ করলাম। সঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক আবুল ওয়াহেদ। ঢুকেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম যাত্রার আকর্ষণীয় সংগীত, বিবেক গান।

পালায় তখন পারিবারিক সমস্যা, শহর এবং গ্রামের মানুষের ভালোবাসা ওজন করে বিক্রি করার মতো একটা দৃশ্য চলছে। সুন্দর চিত্রকল্প। বিবেক গাইছে, ‘পাল্টে গেছে যুগের হাওয়া/ভাশুর-শ্বশুর বউ মানে না।’ গানটি শুনে অনেক দর্শক হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। নিজের জীবনের সঙ্গে দর্শক তখন পালা কাহিনির হিসাব কষতে বসেছেন। আমাকে দেখে ফিরে তাকালেন যাত্রা-দর্শক আক্কাস আলী। ঢাকা ও তার আশপাশের যাত্রার প্যান্ডেলে প্রায়ই দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। পালায় বিবেকের গান, এখানে বালকের গান না থাকলে তিনি ভীষণ ব্যথিত হন। এখানে চৈতালীর চারটি পালা দেখেছেন। খুশি হয়েছেন, দলে সবকিছুই পরিপূর্ণ আছে দেখে। পরিবর্তনটা আরও আকর্ষণীয় হয়েছে।

চৈতালী এর আগে নওগাঁর মহাদেবপুরে ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানে গানবাজনা করে ভালো জমিয়ে এসেছে। সেখানে এখন একত্রে দুটি যাত্রাদলের প্রযোজনা হচ্ছে। প্রথম আলোর এই ‘আনন্দ’ পাতায় সংবাদ প্রকাশের পর আয়োজকেরা সতর্ক হয়েছেন। অশ্লীলতামুক্ত যাত্রা চর্চার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তাঁরা। নিউ রংধনু নামের একটি যাত্রার দল কিছুটা অশ্লীলতায় নামলে তাদের প্রযোজনা বন্ধ রেখে প্রতিমা অপেরা ও আদি ভোলানাথের যৌথ প্রযোজনা শুরু করেছেন তাঁরা। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর হাট চকঘরিয়ায় এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যাত্রা-আয়োজক আ. আজিজ মোল্যা ও আ. হান্নান মিয়া।