টম হ্যাংকস যখন 'সালি'

সালি ছবিতে টম হ্যাংকস
সালি ছবিতে টম হ্যাংকস

নাম তাঁর ক্যাপ্টেন চেসলি সালেনবার্গার। উড়োজাহাজ চালনায় চার দশকের বেশি অভিজ্ঞতা। সেটা কাজে লাগালেন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। সেদিন তাঁর বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে পড়েছিল। এতে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন ১৫৫ জন যাত্রীসহ সব আরোহী। তখন ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন পাইলট সালি। লা গার্দিয়া বা অন্য কোনো বিমানবন্দরে ফিরে যাওয়ার মতো জ্বালানির মজুত ছিল না। ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিলেন সালি। চার মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে হাডসন নদীতে অবতরণ করালেন উড়োজাহাজটিকে। সে যাত্রায় রক্ষা পেলেন সবাই।

.
.

অনন্য পেশাদারির সেই গল্প নিয়ে হলিউডের নতুন চলচ্চিত্র সালি মুক্তি পেয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। নাম ভূমিকায় রয়েছেন তারকা অভিনেতা টম হ্যাংকস। শুভ্রকেশ গুঁফো চেহারায় তাঁকে দর্শকেরা পছন্দ করবেন, এমনটাই আশা পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউডের। অন্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আছেন লরা লিনে, অ্যানা গান, অ্যারন এখার্ট, অটাম রিজার, জেরি ফেরারা প্রমুখ।
পরিচালক হিসেবে ইস্টউডের এটা ৩৫তম ছবি। সংলাপ অত্যন্ত মার্জিত ও সুন্দর। সম্ভাব্য বেদনাময় একটা কাহিনির তিনি সুসমাপ্তি টেনেছেন।
উড়োজাহাজ অবতরণ করানোর ওই ঘটনা নিয়ে পরে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সালির চিত্রনাট্যেও এটা বার বার দৃশ্যমান। কারণ, যে ঘটনাটাকে যৌক্তিক এবং বীরত্ব হিসেবে দেখেছেন অনেকে, সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড। প্রথমদিকে তাদের যুক্তি ছিল, উড়োজাহাজটি ফিরিয়ে নেওয়া যেত। এটা নিয়ে সালি বেশ ভাবনায় পড়ে যান। নির্ঘুম কাটে কয়েকটি রাত।

একটা দৃশ্য এমন যে সালি ও তাঁর সহযোগী পাইলট ওই বিমান হাডসন নদীতে না নামিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর সেটা ম্যানহাটনের কয়েকটি অট্টালিকায় ধাক্কা খেয়ে চুরমার হয়ে যায়। এমন কল্পনা সালিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি রাতের শহরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। হাডসন নদীর যেখানে উড়োজাহাজটা নেমেছিল সেখানে গিয়ে ভাবনায় নিমজ্জিত হন। সাংবাদিকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে। সালির স্ত্রীও চিন্তায় পড়ে যান। ব্যক্তিগত জীবনে ও বাইরে তোপের মুখে পড়েন সালি। টেলিভিশন ভাষ্যকারদের কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, সালি একজন প্রতারক। তিনি বিনা প্রয়োজনে বিমানটিকে নদীতে নামিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন! কাজেই তাঁকে বরখাস্ত করে পেনশন স্থগিত করে দেওয়া যেতে পারে! কিন্তু অটুট-মনোবল সালি বলেন, ‘নিজেকে আমার বীর মনে হয় না। শুধু নিজের দায়িত্বটা পালন করেছি। যে কোনো মানুষ এটা করবে।’

টম হ্যাংকসকে এ ছবিতে তাঁর আসল বয়সের চেয়ে বুড়োটে দেখিয়েছে। সন্দেহাতীত সততা আর বিচারবোধ সম্পন্ন একজন ব্যক্তির ভূমিকায় তাঁর সাবলীল অভিনয় সালি ছবির বড় আকর্ষণ। কাহিনির অন্য চরিত্রগুলো খুবই একমাত্রিক। হাইয়েস্ট ডিউটি: মাই সার্চ ফর হোয়াট রিয়েলি ম্যাটার্স নামে ক্যাপ্টেন সালেনবার্গার ও তাঁর সহযোগী জেফ্রি জাসলোর লেখা বই এ ছবির কাহিনির ভিত্তি। আর এতে সালেনবার্গার ও তাঁর স্ত্রী লরি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।

আশিস আচার্য

মুভি ইনসাইডার, বিবিসি ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে