তিনিই বাবা তিনিই মা

একসময়ের চিত্রনায়িকা দোয়েলের মেয়ে দীঘি। দোয়েলের মৃত্যুর পর আরেক চিত্র তারকা সুব্রতই দীঘির সব—তিনিই বাবা, তিনিই মা
সেই ছোট্ট দিঘির কথা কি আপনাদের মনে আছে? চিত্রনায়িকা দোয়েলের মেয়ে? বাবা সুব্রতকেও কি অচেনা লাগছে? নিশ্চয় না। দোয়েল মারা যাওয়ার পর দিঘির বাবা, মা দুটোই এখন সুব্রত।
অনেক ছলাকলা করে দিঘির মান ভাঙান সুব্রত। বাবা ডাকতে গেলেই কখনো ‘আর ১০ মিনিট’, কখনো ‘আর পাঁচ মিনিট’, কখনো বা ‘দুই মিনিট’-এর আবদার করে বসে দিঘি। ঘুম ভেঙে এভাবেই দিন শুরু হয় দিঘির। বাবার সঙ্গে। ছোট ছোট এই কাজের সময় মায়ের না থাকা এখন খুব একটা কষ্ট দেয় না তাকে। কারণ, সুব্রতই বেশ সামলে নিয়েছেন বাবা ও মা—দুজনের দায়িত্বই। তবু যখন হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় মায়ের কথা, তখন দিঘি যেন নিজের ভেতরই দোয়েলকে আবিষ্কার করতে পারেন। নিজের ভেতর মাকে ধারণের এ বিষয়গুলো সুব্রত স্পষ্ট বুঝতে পারেন। বুঝতে পারেন, দিঘি ঠিক দোয়েলের মতোই হয়ে উঠছে।
বাবার কাছে ময়না পাখির গল্প বলা ছোট্ট দিঘি, এখন সত্যিই নিজের সব গল্প বাবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। দিঘি এখন পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে। অনেক চাপ পড়াশোনার, অনেক ব্যস্ততা। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও বেড়ে ওঠার এই সময়টাতে একান্ত কিছু কথা বলার জন্য পাশে প্রয়োজন হয় সবচেয়ে কাছের কিছু মানুষের। দিঘির আশপাশে অনেকেই আছে তার কথা শোনার জন্য। কিন্তু সবচেয়ে কাছের যে জন, ‘মা’—তিনিই পাশে নেই।
মা বলে গেছেন, দিঘিকে হতে হবে অনেক বড় ডাক্তার। সে কথা রাখতেই এখন মন খারাপের সময় নেই তার। সময় নেই বাবা সুব্রতরও। ‘মেয়েকে ডাক্তার বানাতে হবে’—স্ত্রীকে দেওয়া সেই কথা রাখতেই নিজের সবটুকু তিনি ঢেলে দিচ্ছেন সন্তানের জন্য। সকালে মেয়েকে ঘুম থেকে ওঠানো থেকে শুরু করে, রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া—প্রতিটি কাজই সুব্রত করেন একনিষ্ঠভাবে।
সুব্রত বলেন, ‘প্রতিদিনকার কাজগুলো সামলে নিয়েছি। কিন্তু উৎসবের সময় এলে দোয়েলের শূন্যতা অনেক বেশি অনুভব করি। এই যেমন ঈদের সময়। দোয়েলই আমাকে প্রথম ঈদ করতে শিখিয়েছিল। ঈদের খাবার, ঈদের আনন্দ, কেনাকাটা—এসব আগে কিছুই বুঝতাম না। দোয়েল এসব আমাকে বুঝিয়েছিল। আমি আগে শপিং একদম করতাম না। এটা ছিল দোয়েলের কাজ। কিন্তু এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাকেই কেনাকাটা করতে হয়। তাদের শেখাতে হয় উৎসবের খুঁটিনাটিগুলো।’
দিঘি একাই শিখে নিচ্ছে মায়ের সাজগোজের সব কৌশল। সুব্রত নাকি অবাক হয়ে দেখেন, যখন দিঘি নিজেকে তৈরি করে, অবচেতনভাবেই দিঘি তার মায়ের কাছ থেকে নিজেকে সাজানোর এই গুণটা পেয়েছে। তখনই সুব্রত বুঝতে পারেন, তিনি আসলে একা নন। দোয়েলের না থাকার মধ্যেও, তার উপস্থিতির একটা আভাস আছে।
সুব্রতই যে শুধু ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করেন, এমনটা নয় মোটেও। তিনি জানান, দিঘি নাকি দিন দিন সুব্রতর মেয়ে থেকে মায়ে পরিণত হয়ে উঠছে। বাবাকে এখন শাসনও করে ছোট্ট মেয়েটি। কখনো বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেলে ফোনে দিঘির কড়া কথা শুনতে হয় সুব্রতকে, ‘বাবা, কোথায় তুমি? ফিরছ কখন? আজ কি বাসায় ফেরার ইচ্ছে নেই? এখনই আসো!’