
যে তিনজনকে নিয়ে এই লেখা, আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের মধ্যে কোনো মিল নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না, বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে অড্রে হেপবার্ন নামের একটি মেয়ে রোমান হলিডে ছবিতে অভিনয় করে একই ছবির জন্য নারী অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রথমবারের মতো জিতে নেবেন অস্কার, বাফটা আর গোল্ডেন গ্লোব-তিনটি পুরস্কার। এ কথাও রবীন্দ্রনাথের জানার কথা নয়, সেই ছবিটিতে অড্রে হেপবার্নের সহশিল্পী হবেন গ্রেগরি পেক। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার (১৯৫৩) এক দশক আগেই (১৯৪১) রবীন্দ্রনাথ মারা গেছেন। রোমান হলিডে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে আজও স্বীকৃত।
অন্যদিকে অড্রে হেপবার্ন আর গ্রেগরি পেক হয়তো জানতেনই না, নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ কবিতার বাইরে আরও অনেক বৈচিত্র্যময় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যার একটি চলচ্চিত্র। তাঁরা হয়তো জানতেনই না, যে বছর অড্রে হেপবার্নের জন্ম (১৯২৯), সে বছরই তপতী নামে একটি চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে রবীন্দ্রনাথের অভিনয় করার কথা ছিল। ছবিটির চার রিল পর্যন্ত শুটিংও হয়, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিদেশভ্রমণে গেলে ছবিটি আর শেষ পর্যন্ত গড়ায়নি। রবীন্দ্রনাথ নটির পূজা নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন ১৯৩২ সালে। ছবিটি ছিল সবাক। মাত্র চার দিনে ছবিটির শুটিং শেষ হয়। এ ছবিতে উপালির ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ অভিনয়ও করেন।

এই তিনজন মানুষ তাহলে মিললেন কী করে? অড্রে হেপবার্ন মারা যান ১৯৯৩ সালের ২০ জানুয়ারি। সুইজারল্যান্ডে। সেখানে তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রেগরি পেক। অড্রে হেপবার্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জনসমক্ষে গ্রেগরি পেক আবৃত্তি করেন অড্রের প্রিয় কবিতাটি। ইংরেজিতে: ‘আই সিম টু হ্যাভ লাভড ইউ ইন নাম্বারলেস ফর্মস, নাম্বারলেস টাইমস.../ইন লাইফ আফটার লাইফ, ইন এজ আফটার এজ, ফরএভার।’
এ কবিতার রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিতাটি ‘অনন্ত প্রেম’। যার প্রথম দুই পঙ্ক্তি: ‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।’
যে তিনজন মানুষ অনিবার্যভাবে এই লেখায় এসেছেন, তাঁদের দুজনের এ মাসেই জন্মদিন। ৪ মে ছিল অড্রে হেপবার্নের জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ এ বছর পালিত হচ্ছে আজ, ৮ মে। তাঁদের প্রতি রইল জন্মদিনের শুভেচ্ছা।