
ন্যান্সি, কনা, কোনাল, সাব্বির, ইমরান—এ সময়ের শিল্পী। গান নিয়ে তাঁদের যত ব্যস্ততা। প্রায় সব অনুষ্ঠানেই তাঁরা দেশের গান করেন। ‘দেশের গান’ তাঁদের ভালোবাসার। দেশের গান গাওয়ার সময় অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করে তাঁদের মধ্যে। সেই অনুভূতি তাঁরা ছড়িয়ে দেন দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে। তাঁদের কাছ থেকে সেই গল্প শুনেছেন মনজুর কাদের।
ন্যান্সি
দেশের গান গাইতেই অনেক বেশি গর্ব হয়। দেখা গেছে, কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে দেশের গান গাওয়ার সময় দর্শকেরা অল্প কিছুক্ষণের জন্য হলেও দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। তবে বেশির ভাগ অনুষ্ঠানে যখন দেশের গান করি, দেখি সেদিকে কারও খেয়াল নেই। এটা আমাকে কষ্ট দেয়। দেশের গানের মধ্যে ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ গাইতে খুব ভালো লাগে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গানটা গাওয়ার চেষ্টা করি। আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আমার নিজের কোনো দেশাত্মবোধক গান নেই। এই কষ্টটা রয়ে গেছে। যখন কোনো সংগীত পরিচালকের কাছে যাই, তাঁদের দেশের গানের জন্য অনুরোধ করেছি। পাইনি। দেশের গান গাওয়ার জন্য আমি সম্মানী নেব না। মাকে নিয়ে গান গাওয়ার সময়ও কোনো সম্মানী নিইনি।
কনা
সব অনুষ্ঠানে দেশের গান করা হয় না। দর্শক বুঝে তারপর গাইতে হয়। আমি প্রায়ই ক্রিকেটের গান করি। ক্রিকেটের গানের মধ্যেও দেশের কথা আছে। বেশির ভাগ অনুষ্ঠানে দর্শকেরা চটুল গান শুনতে পছন্দ করেন, তাই সেই বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। যে অনুষ্ঠানে ভালো দর্শক থাকেন, সেখানে দেশের গান গাই। আমি রুনা লায়লার ভক্ত, তাঁর ‘নদীর মাঝি বলে এসো নবীন’ গানটি আমার খুব পছন্দের। অনুষ্ঠানে সুযোগ পেলেই আমি গানটি গাই। দেশের গান খুব আবেগ দিয়ে গাইতে হয়। তাই গাইতে খুবই ভালো লাগে।
সাব্বির
আমি যদি কোনো অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী হয়ে থাকি, তাহলে দেশের গান দিয়ে শুরু করি। যখন মঞ্চে থাকি, তখন আমরা কিন্তু গানের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু পৌঁছে দিতে পারি। আমাদের অনেকে অনুসরণ করেন। আমরা যখন দেশের গান গাই, তখন শ্রোতারা অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান যখন নতুনদের দিয়ে রেকর্ড করা হয়, তাতে আমিও কণ্ঠ দিয়েছি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু গান সব সময় করি। দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে ‘সূর্যোদয়ে তুমি’ আর ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’ গান দুটি নিয়মিত গাই।
কোনাল
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অনেকেই তাঁদের জীবন দিয়েছেন। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে আমরা সুন্দর একটা দেশ পেয়েছি। তাই তো দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানেই অনুষ্ঠান করতে যাই, শুরুতেই দেশের জন্য জীবন দেওয়া সেই সব মানুষকে স্মরণ করি। গানের মধ্য দিয়ে সবাইকে তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই। যাঁদের জন্য বাংলা ভাষা পেয়েছি, স্বাধীন দেশে গান গাইতে পারছি, এমনকি যাঁরা বাঙালি না হয়ে গানে গানে বাংলাদেশকে সম্মান জানিয়েছেন, তাঁদের আমার কণ্ঠ দিয়ে সম্মান জানাতেই দেশের গান করি। আমি বেশির ভাগ অনুষ্ঠানে জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গানটি গাই। আমার প্রথম একক অ্যালবামে গানটি গেয়েছি। ‘বাংলাদেশ’ গানের একটা গল্প আছে, আছে বেদনা। গাওয়ার সময় আমি মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোয় হারিয়ে যাই।
ইমরান
বিশেষ কোনো উপলক্ষ ছাড়া দেশের গান করা হয় না। মার্চ কিংবা ডিসেম্বর মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে টিভিতে কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে দেশের গান করি। এ ধরনের গানের মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের দেশ ও শহীদদের কথা মনে করিয়ে দেওয়া চেষ্টা করি। দেশের গান গাওয়ার ক্ষেত্রে আমি বরাবরই জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটা গাই। প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা গানটা আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে। গানটা শুনলে নিজের মধ্যে অন্য রকম উদ্যম কাজ করে। জাগরণের একটা ব্যাপার আছে।