নতুন সাজে মহানায়কের সাজঘর

মহানায়ক উত্তমকুমারের আজ ৩৯তম প্রয়াণদিবস। ১৯৮০ সালের এই দিনে ৫৪ বছর বয়সে তিনি পাড়ি দেন পরপারে। দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। তবু মহানায়কের স্মৃতি কলকাতার মানুষের হৃদয় থেকে এতটুকু মলিন হয়নি। প্রতিবছরের মতো এবারও এই দিনকে ঘিরে কলকাতায় আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে মহানায়কের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এক অনুষ্ঠানের। এখানে মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট তারকাদের হাতে তুলে দেবেন ‘মহানায়ক উত্তম পদক’।
এদিকে মহানায়কের প্রয়াণদিবসকে ঘিরে আজ সকাল নয়টায় কলকাতার টালিগঞ্জের ছবিপাড়ায় নতুন রূপে গড়া মহানায়কের সাজঘর বা মেকআপ রুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। মালা দেওয়া হয়েছে টালিগঞ্জে মহানায়কের আবক্ষমূর্তিতে।
টালিগঞ্জের এনটি-ওয়ান স্টুডিওতে ছিল মহানায়কের ব্যক্তিগত সাজঘর। মহানায়কের মৃত্যুর পরও সেই সাজঘর ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই স্টুডিওতে। এ বছর এপ্রিল মাসে স্টুডিওর সংস্কারকাজের সময় ভেঙে ফেলা হয় মহানায়কের সাজঘরটি। এরপর তা নতুন করে গড়ে আজ মঙ্গলবার সকালে উদ্বোধন করা হয়। ৯০ বছরের পুরোনো এই সাজঘরে বসে চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের জন্য মেকআপ নিয়েছেন মহানায়ক। এখান থেকে তিনি মেকআপ নিয়ে শুটিং করেছেন জনপ্রিয় হওয়া অনেক ছবিতে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নায়ক’, ‘সব্যসাচী’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’, ‘আলো আমার আলো’, ‘কমললতা’, ‘জতুগৃহ’ এবং শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। ১৯৮০ সালে মৃত্যুর পরও মহানায়কের সাজঘরের এতটুকু পরিবর্তন করা হয়নি। সেভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাঁর সাজঘরে এখনো আছে তাঁর ব্যবহার করা সেগুন কাঠের খাট, টেবিল, ইজি চেয়ার ও খড়ম। স্টুডিওর কর্মীরা এখনো এই সাজঘরে রক্ষিত মহানায়কের ছবিতে ফুলের মালা দেন।
টালিগঞ্জের এই স্টুডিওতে শুধু মহানায়কের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল সাজঘরটি। অন্য শিল্পীরা এই সাজঘর ব্যবহার করেননি। মহানায়িকা সুচিত্রা সেন যখন শুটিং করতেন, তখন তাঁর জন্য আলাদা সাজঘর দেওয়া হতো। তারপর সেই সাজঘর অন্য শিল্পীরা ব্যবহার করতেন। কিন্তু মহানায়কের ক্ষেত্রে তেমনটা ছিল না। মহানায়কের এই সাজঘরে এসে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী দেবী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা আরও আড্ডা দিয়েছেন সাজঘরের সামনের বাগানে। এ সময় তাঁদের খাবারের তালিকায় ছিল মুড়ি-বাদাম আর চা-কফি।
এবার অবশ্য নতুন করে সাজানো হয়েছে মহানায়কের এই সাজঘর। ১০ বাই ১২ ফুট মাপের এই সাজঘরে এবার সাদা রং দেওয়া হয়েছে। মহানায়ক পছন্দ করতেন সাদা রং। দেয়াল সাদা রঙের। কাঠের জানালা সাদা। মেঝের টাইলসও সাদা রঙের। এমনকি মহানায়কের স্মৃতিবাহী খাট, টেবিল, চেয়ার, আয়না, আলনা, ইজি চেয়ারও সাদা রং করা হয়েছে।