নাটকের ভেতরে নাটকীয়তা ঢুকে গেছে

ঈদুল আজহায় দেশের একগুচ্ছ টেলিভিশন চ্যানেলে ছিল শতাধিক নাটক। কোনোটি একক, কোনোটি ধারাবাহিক। ঈদের সাত দিন দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার এ নাট্যযজ্ঞে কি সাড়া দিয়েছিলেন দর্শকেরা? আট বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি আমরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, গৃহিণী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী।

চ্যানেল বেড়েছে, বেড়েছে অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংখ্যা। নাটকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কোনো কোনো পরিচালক সপ্তাহব্যাপী তাঁর নাটকের সঙ্গে রাখার জন্য তৈরি করেছেন ধারাবাহিক নাটক, যা ঈদের সাত দিন পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।

সাক্ষাতে, ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের একঝাঁক টেলিভিশন দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যায় উদাসীন প্রতিক্রিয়া। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির সেই দর্শকেরা জানিয়েছেন ঈদের টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁদের নাটক দেখার অভিজ্ঞতার কথা। তবে বেশির ভাগই বলেছেন, তাঁরা নাটক দেখেননি। আর যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ চ্যানেলে চ্যানেলে ভেসে বেড়িয়েছেন। দেখেছেন কোনো নাটকের শেষাংশ বা কোনো নাটকের মাঝের অংশটুকু। নাটক না দেখার কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞাপন বিরতিকে, অনেকে নাটকের মানকে। কেউ আবার বলেছেন, নাটকগুলো বেশ একঘেয়ে। তার থেকে ঈদের ছুটিতে বেড়ানো ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াই বেশি আনন্দদায়ক। কারও কারও বিনোদনের অবলম্বন ছিল কলকাতার চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান। আর বিজ্ঞাপনের বাড়বাড়তি দেখে জনপ্রিয়তা পাওয়া চট্টগ্রামের ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলি’ গানের প্যারোডি করে একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘নাটক হই হই আঁরে অ্যাড দেখাইলি...।’

চলুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকজন বাংলাদেশি নাট্যদর্শকের ঈদের নাটক দেখার অভিজ্ঞতা।

* ঈদে মোট তিনটি নাটক দেখেছি। একটির নাম বসন্ত বাতাসে, একটি মায়া কান্না আর একটির নাম মনে করতে পারছি না। প্রথমটি বেশ ভালো লেগেছে। নির্মাতা আমার ফেসবুক বন্ধু, বিশেষভাবে দেখতে অনুরোধ করেছিলেন। দ্বিতীয়টি ভালো লাগেনি। ঈদের বেশির ভাগ নাটকে মোশাররফকে দেখে একটু বিরক্ত বোধ করেছি। আমার স্ত্রী কলকাতার সিরিয়ালগুলো নিয়মিত দেখেন। ঈদের অনুষ্ঠানমালা তাঁকে টানেনি। তিনি তাঁর নিয়মে প্রিয় সিরিয়ালগুলো দেখেছেন। আমার শোবার ঘর থেকে টিভির ঘরটা কাছেই। আমিও সেসব এড়াতে পারিনি। এর ফলে ঈদে নাটক দেখার খুব বেশি সুযোগও হয়নি।

চঞ্চল ভৌমিক, শিক্ষা কর্মকর্তা, রংপুর

* ঈদের নাটক দেখি না। ভালো লাগে না। বিজ্ঞাপন শুরু হলে অন্য চ্যানেলে চলে যাই, পরে ভুলে যাই যে কোন চ্যানেলে কোন নাটকের কোন জায়গা পর্যন্ত দেখেছিলাম। তবে মাঝে মাঝে স্টার জলসায় পটল কুমার গানওয়ালা সিরিয়ালটা দেখা হয়। আমার শাশুড়ি ও মা বাংলা টিভির অনুষ্ঠানগুলো দেখেন না খুব একটা।

সাফা, গৃহবধূ, রাজশাহী

* একটা নাটকও দেখিনি। সময় পাইনি। কী কারণে যেন ঈদে টেলিভিশন দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণটা বলা যাবে না।

অনন্যা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

* গত ঈদে যে ধরনের অনুষ্ঠান দেখিয়েছে, এবারও সেসব ছিল। ঘুরেফিরে একই পাত্রপাত্রী, একই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। নাটকে বৈচিত্র্য নেই, গল্পও নেই। তাই দেখিনি। প্রতিদিন কলকাতার যে সিরিয়ালগুলো দেখি, সেগুলো মিস করিনি। তবে নিয়মিত দেশের খবরগুলো দেখেছি।

>কেউ কেউ চ্যানেলে চ্যানেলে ভেসে বেড়িয়েছেন। দেখেছেন কোনো নাটকের শেষাংশ বা কোনো নাটকের মাঝের অংশটুকু। নাটক না দেখার কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞাপন বিরতিকে, অনেকে নাটকের মানকে। কেউ আবার বলেছেন, নাটকগুলো বেশ একঘেয়ে

মোরশেদা ইসলাম, গৃহবধূ, খুলনা

* কয়েকটা নাটক দেখেছি; কিন্তু নাম মনে করতে পারছি না। দেখেছি, তাৎক্ষণিক আনন্দ পেয়েছি এবং ভুলে গেছি। আরমান ভাই ও কুরবানীর গরু নিয়ে একটা নাটকের কথা মনে আছে। এখনকার টিভি নাটকগুলোর ভেতরে নাটকীয়তা ঢুকে গেছে। আর্টিস্টরা এমনভাবে অভিনয় করেন যে বোঝা যায় তাঁরা অভিনয় করছেন। জীবনের সঙ্গে সেসব মেলে না। অনেক পরিচালক আবার আঞ্চলিক ভাষায় নাটক করছেন। মনে হচ্ছে চলিত ভাষার বিরুদ্ধে একধরনের আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। সেই ভাষাগুলোও যে পুরোপুরি ওই অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করছে তা-ও না। যেমন সিকান্দার বক্স যেভাবে কথা বলে, ময়মনসিংহের লোকেরা আসলে ঠিক সেভাবে কথা বলে না।

শাদমান শাহিদ, শিক্ষক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

* এখনো একটাও দেখিনি। নাম লিখে রেখেছি। ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে পরে দেখব। এর মধ্যে আছে জলবউ, গহীন সুন্দরী, বাবর আলীর হেলিকপ্টার, শ্রাবণ এসেছিল গান হয়ে।

মহিউদ্দিন সেলিম, আয়কর আইনজীবী, ময়মনসিংহ

* নাটক দেখতে বসেছিলাম কিন্তু ভীষণ বিরক্ত হয়েছি। অনেক কষ্টে দাদার দেশের জামাই নামের একটা নাটক দেখেছি। এই নাটকগুলো যে কেন বানাতে হয় বুঝি না।

সাবরিন শেহেরিন, গৃহবধূ, চট্টগ্রাম

* ঈদে ল্যাপটপে সিনেমা দেখেছি। নাটক দেখেছি একটি অন্য রকম গল্প। সেটা খারাপ লাগেনি। কিন্তু শেষের দিকে বুঝতে একটু কষ্ট হয়েছে।

সুমন রায়, উদ্যোক্তা, বরিশাল

গ্রন্থনা: রাসেল মাহ্‌মুদ