বইমেলায় কবরীর 'স্মৃতিটুকু থাক'
![সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একুশে বইমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে লেখক ও অতিথিরা ছবি আবদুস সালাম](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2017%2F02%2F25%2F1f1e4d81fc61b598f81025876325db62-58b186d913220.jpg?auto=format%2Ccompress)
একজন নারীর উপস্থিতিতে আজ শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটা অংশের পরিবেশ বদলে গেল। কালো জামদানি জড়ানো এই নারীর চিরচেনা হাসি পাঠকদের আগ্রহের বিষয় হয়েছে। তিনি কবরী। আজ শনিবার মেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে ছিল তাঁর লেখা ‘স্মৃতিটুকু থাক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।
চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে বেড়ে ওঠা কিশোরী মিনা পালের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সাদা শাড়ি পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে মাস্টারি করবেন। কিন্তু একসময় কিশোরী ভীরু ডাগর চোখ মেলে ধরলেন ক্যামেরার সামনে, উত্তাল হলো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। বাংলাদেশের রূপালি পর্দার সেই কিশোরীর নাম কবরী। নায়কশাসিত চলচ্চিত্র জগতের দখল নিলেন ‘মিষ্টি মেয়ে’। অর্ধ শতাব্দী আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রের পর্দা কাঁপিয়ে মিষ্টি মেয়ের তকমা পাওয়া স্কুল-বালিকার জীবনের গল্প বইমেলায় নিয়ে এসেছে বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড—বিপিএল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন কবরী। মোড়ক উন্মোচনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী প্রমুখ।
‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে কবরীর এই আত্মজৈবনিক রচনায় ঢাকাই সিনেমার সদর-অন্দরের পাশাপাশি এই শিল্পের ওপর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী রাজনীতির অভিঘাতের কথাও উঠে এসেছে ।
ষাটের দশকে স্কুল পড়ুয়া মিনা পালের বাংলা চলচ্চিত্রের ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশ, উত্তাল একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত সংগঠন, সেলুলয়েডের বাইরে রাজনীতি জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি দুই মলাটে বেঁধে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী প্রথমবারের মতো একুশের বইমেলায় এলেন লেখক পরিচয় নিয়ে।
জানা গেছে, ‘সুতরাং’-এর সেটে প্রথম শটেই চড় খেয়ে কেঁদে ভাসানোর গল্প যেমন বইটিতে আছে, তেমনি আছে কিশোরী মনে প্রথম কারও জন্য ‘প্রেম প্রেম অনুভূতি’ হওয়ার কথা।
ঢাকাই ছবির ইতিহাসে রাজ্জাক-কবরী জুটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার রসায়ন আর কবরীর জীবনে বাস্তবের রাজ্জাকও ধরা পড়েছেন এই স্মৃতিকথায়।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসে আজ কবরী নিজেকেই প্রশ্ন করেন, ক্যামেরার সামনে নায়ক-নায়িকার সেই ভালোবাসা কি শুধুই অভিনয় ছিল?
‘ভালো লাগতে লাগতেই তো ভালোবাসা হয়, অভিনয় করতে করতে যদি ভালোবাসা না-ই হয়, তাহলে মানুষের মনে ভালোবাসা তৈরি হবে কী করে? সিনেমামোদী যাঁরা এসব সিনেমা দেখেছেন তাঁরাও হয়ে যেতেন রাজ্জাক আর অপরপক্ষ নিজেকে ভাবত কবরী, তাই না?’
১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’ সিনেমায় দর্শক এক লাস্যময়ী কবরীকে আবিষ্কার করে। সেই চলচ্চিত্রের ‘সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না’ গানটি এখনো বহু দর্শকের বুকে বাজে।
অনেক ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে পার করে আসা এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আমার কপালে প্রেমের সুখ কোনো দিন হয়নি। যাক আপদ চুকেছে। প্রেমে পড়ে কার না কার ঘরনি হতাম। তবে যা হওয়ার তা তো হয়েইছে। সবার জীবন কি এক রকম হয়? এই পৃথিবী একটা যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধে কেউ জেতে কেউ হারে—মেনে নিতেই হয়। এভাবেই বুঝি জীবন কেটে যায়।’
‘স্মৃতিটুকু থাক’ ধারণ করেছে কবরীর শৈশব–কৈশোরের কথা । এসেছে ভোটের মাঠে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, এক সময় যে পরিবারের বধূ ছিলেন তিনি। সব জয় করেই কবরী নবম সংসদে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন।
১৫৬ পৃষ্ঠার বইটির ভূমিকা লিখেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। তিনি লিখেছেন, ‘কিংবদন্তিতুল্য চিত্রনায়িকা কবরীর লেখা আত্মজীবনী ‘স্মৃতিটুকু থাক’-এর পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আমার মনে হলো, আমি কোনো কবির রচিত আত্মজৈবনিক গদ্য পাঠ করছি।’
বইটি কবরী উৎসর্গ করেছেন তার মা লাবণ্যপ্রভা পাল ও বাবা কৃষ্ণ দাস পালকে। এতে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর পোস্টারের পাশাপাশি বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্রও রয়েছে।