
চলতি বছরে ১০০ বছর পূর্তি হলো বলিউডের। এ উপলক্ষে বলিউডের ক্ল্যাসিক সব ছবি, খুঁটিনাটি সব বিষয় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে কয়েকটি পর্বে
১৯৩০-এর দশকে বলিউড
১৯৩০-এর দশকে বলিউডে শুরু হয় সবাক ছবির যাত্রা। এ সময় উল্লেখযোগ্য নায়কেরা ছিলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর, কে এল সায়গল, অশোক কুমার, পিসি বড়ুয়া। নায়িকাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন দেবীকা রানী, দুর্গা খোটে, নাদিয়া, যমুনা, পদ্মা দেবী ও কানন দেবী। এ সময় যেসব ছবি আলোচিত হয় সেগুলো হলো:
আলম আরা (১৯৩১): আরদেশির ইরানি পরিচালিত মাস্টার ভিথাল, পৃথ্বীরাজ কাপুর, জোবেইদা অভিনীত এ ছবিটি বলিউডের প্রথম সবাক ছবি। বোম্বের ম্যাজেস্টিক সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পায়।
চণ্ডিদাস (১৯৩৪): নিতিন বোস পরিচালিত এ ছবিতে ১৫ শতকের এক কবি ও নিচু গোত্রের এক হিন্দু মেয়ের প্রেম দেখানো হয়েছে।
অচ্ছুৎ কন্যা ( ১৯৩৬), অমর জ্যোতি (১৯৩৬)। সান্ত তুকারাম (১৯৩৬): বিষ্ণুপান্ত গোবিন্দ দামলে পরিচালিত এ ক্লাসিক ছবিটি ১৭ শতকের এক জনপ্রিয় সন্ন্যাসী কবি তুকারামকে কেন্দ্র করে। ১৯৩৭ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্পেশাল রিকমেন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পায় ছবিটি। দেবদাস ( ১৯৩৬): শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে প্রমথেশ বড়ুয়া প্রথম হিন্দি ছবি করেন। এতে অভিনয় করে বলিউডের প্রথম স্টার হন কে এল সায়গল। দুনিয়া না মানে (১৯৩৭), পুকার (১৯৩৯), আদমি (১৯৩৯), এক হি রাস্তা (১৯৩৯)।
বলিউড টুকিটাকি
১৯৩৩ সালে ভারতের প্রথম রঙিন ছবিসাইরানধ্রি মুক্তি পায়। জার্মানিতে এর কাজ করা হয়।
১৯৩৫ সালে পরিচালক নিতিন বোসের সুপারিশে তাঁর ধুপ ছাও ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক গানের প্রচলন হয়।
১৯৩৩ সালে ভারতের প্রথম এয়ারকন্ডিশন্ড মুভি থিয়েটার ‘রেগাল সিনেমা’ উদ্বোধন হয়।
বলিউডে প্রথম স্ট্যান্ট ব্যবহার শুরু হয় ১৯৩৫ সালে হান্টারওয়ালি ছবিতে। অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী মেরি ইভান্স সে সময় স্ট্যান্ট করতেন। তাঁকে ‘ফিয়ারলেস নাদিয়া’ ডাকা হতো।
১৯৪০-এর দশকে বলিউড
১৯৪০-এর দশকে কিশোর সাহু, পাহাড়ি স্যানাল, ভারত ভূষণ, অশোক কুমাররা ছিলেন আলোচিত নায়ক। নায়িকাদের মধ্যে কানন দেবী, যমুনা, ললিতা পাওয়ার, নূরজাহান (পরে পাকিস্তান চলে যান), সুরাইয়া, মধুবালা ছিলেন আলোচিত। এ সময়ের নামকরা ছবিগুলো হলো:
অওরাত (১৯৪০): অনেকেই হয়তো জানেন না, মেহবুব খানের এ ছবিটি তাঁরই ক্লাসিক ছবি মাদার ইন্ডিয়ার (১৯৫৭) আগের সংস্করণ। এ ছবিতে বাস্তবতা বোধ ও মাটির ছোঁয়া অনেক বেশি ছিল, রিমেক মাদার ইন্ডিয়ায় যার ঘাটতি দেখা যায়। সিকান্দার (১৯৪১), পড়শী (১৯৪১), রোটি ( ১৯৪২), রামরাজ্য ( ১৯৪৩), পৃথ্বী বল্লভ ( ১৯৪৩), ডক্টর কোন্টিস কি অমর কাহানি (১৯৪৬), নিচা নাগার (১৯৪৬): চেতন আনন্দের এ ছবিতে ভারতের গ্রামীণ সমাজে যে অন্যায় চলে, তা উঠে এসেছে। ধনীদের মাধ্যমে গরিবদের নিগৃহীত হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ১৯৪৬ সালে প্রথম বলিউড ছবি হিসেবে কাঙ্ক্ষিত গ্র্যাঁন্ড প্রি প্রাইজ (বর্তমানে পাম ডি অর বা গোল্ডেন পাম পুরস্কার) পায় ছবিটি। পণ্ডিত রবিশঙ্কর এ ছবিতেই প্রথম মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। মহাল (১৯৪৯): কমল আমরোহি পরিচালিত সাসপেন্স থ্রিলার ছবি এটি। সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে চমকে ওঠার মতো ব্যতিক্রমী ছবি। আন্দাজ (১৯৪৯): ত্রিভুজ প্রেমের গল্প অবলম্বনে মেহবুব খানের এ ছবিটি মাস্টারপিস। ছবিতে নার্গিসের প্রেমে হাবুডুবু খান দুই সুপারস্টার দিলীপ কুমার ও রাজকাপুর। ভারতের পরিবর্তনশীল সমাজে নারী-পুরুষের পরিবর্তনশীল সম্পর্ক সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় ছবিটিতে।
বলিউড টুকিটাকি
দেশীয় প্রক্রিয়ায় ১৯৩৭ সালে ভারতের প্রথম রঙিন ছবি আরদেশির ইরানির কিষান কানাইয়া।
জে বি এইচ ওয়াদিয়ার ১৯৩৭ সালের ছবি নওজোয়ান প্রথম ভারতীয় ছবি, যাতে কোনো গান ব্যবহার করা হয়নি।
তথ্যসূত্র: কালচারোপিডিয়া ডট কম, ক্রিয়েটিভ ডট সুলেখা ডট কম, উইকিপিডিয়া, আইএমডিবি, জি নিউজ ডট ইন্ডিয়া ডট কম
আহমেদ শরীফ