বলিউডে পিছিয়ে বাঙালি জওয়ান

রানী মুখার্জি,সুস্মিতা সেন,বিপাশা বসু,কাজল,কঙ্কনা সেন শর্মা,শাহানা গোস্বামী
রানী মুখার্জি,সুস্মিতা সেন,বিপাশা বসু,কাজল,কঙ্কনা সেন শর্মা,শাহানা গোস্বামী

ব্যোমকেশ বকশি ছবির নির্মাণশৈলী নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। সব ঠিকঠাক। তবু কেন জানি ভারতীয়দের মন কারেনি ভারতের এই হিন্দিভাষী ব্যোমকেশ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সত্যান্বেষীকে নিয়ে টালিউডে তো রীতিমতো তোলপাড় অবস্থা। ব্যোমকেশবেশী আবির চ্যাটার্জি তো এই ছবি দিয়েই মাত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বক্স অফিস। তাহলে ভারতের সামগ্রিক বক্স অফিসে কেন জাদু ছড়াতে পারল না এই সেকেলে গোয়েন্দা? শুরু হলো গবেষণা।

ব্যোমকেশ বকশি ছবিতে সুশান্ত সিং রাজপুত
ব্যোমকেশ বকশি ছবিতে সুশান্ত সিং রাজপুত

অনেক ভেবেচিন্তে বলিউড বিশ্লেষকেরা জানালেন, গলদটা আসলে গোড়ায়। বলিউডের ব্যোমকেশই ঘটিয়েছেন বিপত্তিটা। পাটনার রাজপুতকে যদি বাঙালি বাবুর ছাঁচে ঢালা হয়, তাহলে কি এত সহজেই খাপে খাপ মিলে যাবে? প্রশ্নের জবাবটা ব্যোমকেশ বকশি দেখে থাকলে হয়তো এরই মধ্যে জানা গেছে। গড়বড়ের শুরুটা যে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত থেকেই হয়েছে তা বোঝার আর অবকাশ থাকবে না। দোষ বেচারা সুশান্তের নয়। তিনি যে ছবির জন্য প্রচণ্ড খাটাখাটনি করেছেন, তা তাঁর অভিনয় দেখেই বোঝা যায়। পোশাক থেকে শুরু করে সুশান্তের দৌড়ঝাঁপ আর রহস্যমাখা চাহনি, সবকিছুতেই পেয়েছেন ফুল মার্ক। কিন্তু এ অভিনেতা যে নিজের নামটা বলতে গিয়েই লাইনে থেকে একটু বেলাইনে সরে গেছেন কয়েকবার। তাই তো, পাটনায় জন্ম নেওয়া এই ‘বাঙালি বকশি’কে দিয়ে ছবিটি জমাতে পারেননি পরিচালক দিবাকর ব্যানার্জি।
সুশান্ত সিং ছাড়া দিবাকরের আর তো কোনো উপায় ছিল না। কারণ, বলিউডে বাঙালি অভিনেতা নেই বললেই চলে। আধা বাঙালি হিসেবে অভিষেক বচ্চন (মা জয়া বচ্চনের সূত্রে) এবং সাইফ আলী খানের (মা শর্মিলা ঠাকুর সূত্রে) নাম আসতে পারে, কিন্তু ব্যোমকেশ হিসেবে এই দুই অভিনেতাই যথেষ্ট বুড়িয়ে গেছেন। তাই বলা যায়, বলিউডে বাঙালি অভিনেতা খরা থাকায় বলিউডের ব্যোমকেশ বকশি একেবারে মাঠে মারা পড়ল।
তবে এখন বলিউডবোদ্ধারা বলছেন, ‘হায়, ব্যোমকেশ কেন একজন নারী হলেন না। হলে আর এই গোলমাল বাধত না!’ কারণ, বলিউডে তো আর বাঙালি অভিনেত্রীর অভাব নেই। রানী মুখার্জি, সুস্মিতা সেন, বিপাশা বসু, কাজল, কঙ্কনা সেন শর্মা, শাহানা গোস্বামী, নন্দিতা দাসসহ আরও কত নাম।
কিন্তু এত বাঙালি অভিনেতা কোথায় বলিউডে। সেই অশোক কুমার, কিশোর কুমার আর মিঠুন চক্রবর্তীর পর তো তেমনভাবে কোনো বাঙালি অভিনেতাই বলিউডে খুঁটি গাড়তে পারেনি। অরিজিৎ, অনুপম রায়, প্রীতম, জিৎ গাঙ্গুলীর মতো গানে বাঙালিদের যেই প্রতাপ; কিংবা অনুরাগ বসু, দিবাকর ব্যানার্জি, সুজয় ঘোষদের মতো বাঙালি পরিচালকেরা যেভাবে বলিউড দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তেমন করে একটা বাঙালি অভিনেতা যদি বলিউডে নিজেকে দাঁড় করাতে পারতেন, তাহলে আর ব্যোমকেশের মতো কালজয়ী সাহিত্যকর্মকে এভাবে বক্স অফিসে ডুবতে হতো না। বাঙালি অভিনেতারা কেন বলিউডে অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারছেন না, তা এখন বোদ্ধাদের কাছে বিরাট রহস্য।
পিটিআই, ফার্স্টপোস্ট, দ্য হিন্দু অবলম্বনে