বাবাকে নিয়ে যা লিখলেন পরীমনি

বাবার সঙ্গে পরীমনি
বাবার সঙ্গে পরীমনি

আট বছর আগে বাবা মনিরুল ইসলামকে হারিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। মা যখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স তিন বছরের কম। নানা-নানির কাছেই মানুষ হয়েছেন এই অভিনেত্রী। ছোটবেলায় মা-বাবার আদরও তিনি তাঁদের কাছ থেকেই পেয়েছেন। আজ বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে লেখা একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে পরী জানান, তাঁর জন্মদাতা বাবা মনিরুল ইসলাম হলেও আসল বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন নানা শামসুল হক গাজী। নিজের বাবার সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে আজ পৃথিবীর সব বাবাকে শুভকামনা জানিয়েছেন পরীমনি।

আজ সকালে ফেসবুকে পরীমনি লিখেছেন, ‘তুমি কি বাবা! নাহ তোমাকে কিছু লিখবো না আমি আজ।
লিখবো তোমাকে নিয়ে...
হ্যালো ফেসবুক দুনিয়া, শোন কতই তো বাবা দিবস গেল
আমি শুধু দেখেই গেছি সবার বাবা দিবসের কত কত পোস্ট...
এবার আমিও দিলাম। দেয়ার একটা কারণ ছিল। কারনটা স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম একবার। আজ লিখতে গেলে আবার মেজাজটা সামলাতে পারব না হয়তো।
যা-ই হোক, ছবিটাতে আমি আমার বাবা মনিরুল ইসলামের সাথে।
বাবা বেঁচে নেই আজ ৮ বছর হয়ে যাচ্ছে...
বাবা পুলিশ ছিলেন। বাবার শরীরে পুলিশের পোশাক দেখে আমার ছোট্ট বেলার লক্ষ্য ছিল পুলিশ হবার।
মা মরে যায় তখন আমি ৩ বছরেরও কম ছিলাম। বাবা এই ধাক্কাটা নিতে পারছিলেন না বলে দেশ ছাড়েন।
বাবার ছায়া করে পাই নানুভাইকে।
নানু নানি দুজনই টিচার। নানু বাড়ী আর দাদু বাড়ি দুবাড়িরই বড় নাতনি। অনেক আহ্লাদে বড় হওয়া আমার। কখনো এক বিন্দু অনুভব করিনি মা-বাবার শূন্যতা। ভুল করেও মনে পড়েনি কখনো। এমনকি এখন ভাবি আসলে মা বাবা কী জিনিস!
আজ সত্যি যদি বলি আমার বাবা হলেন আমার নানুভাই শামসুল হক গাজী।
আর আমার জন্মদাতা বাবা হলেন মনিরুল ইসলাম।
ওহ একটা মজার বিষয় বলি, অনেকেরই আমার নাম নিয়ে কৌতূহল দেখেছি। আসল নাম, ডাকনাম, কে রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি...
নাম কখনো আসল নকল হয় নাকি? হাহাহাহা...হতে পারে ডাক নাম অথবা সার্টিফিকেট নাম। আমার পরী নামটা আমার নানিমনির দেয়া। তার নানির নাম ছিল পরীবিবি। আমার জন্মের কিছুদিন আগে তার নানি মারা যান আর আমার জন্মের পর আমার নাম পরী হয়ে যায় আর মনিটা সবাই আদর করেই চালু করে দিল আমার সার্টিফিকেট নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি।
শামসুন মানে সূর্যের আলো। নানুভাইয়ের নামের সাথে মিল করে এই নাম।
আর ‘স্মৃতি’টা বাবা জীবনের প্রথমবার হজ করতে গিয়ে ঠিক করেছিলেন, আল্লাহর কাছে মেয়ে চেয়ে। যদিও বাবা তখন নাকি বিয়েই করেননি, এসব বাবার কাছে শোনা আমার। বাবা মরে যাবার পর আমার স্মৃতি নামটা কেবল স্মৃতিই হয়ে গেল। সবাই বলে মেয়েরা নাকি বাবার স্বভাবী বেশি হয় একটু। আমিও নাকি আমার বাবার মতো বদ মেজাজি, অনেক বেশি আবেগপ্রবণ, স্পটভাষী, প্রচণ্ড সাহস এসব পেয়েছি। বাবার সঙ্গে আমার অনেক বেশি স্মৃতি নেই। বড় হওয়ার পর বাবাকে কাছে পেয়েছিলাম এক বছরের মতো। মনে আছে যেদিন বাবা দেশে ফিরে প্রথম আমার সামনে আসে.... একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো শব্দ করে সেকি কান্না!
কতো যে রাত পোহাতো বাবা মেয়ের। শুধু আমার ছোট্ট বেলার যতো গল্প কাহিনি...একদিন বাবার একটা সাদা রঙের শার্ট আমাকে দিয়ে খুলতে বলল। খুলে দেখি শার্টের ভেতর আঁকা বাঁকা হাতে শুধু বাবা...বাবা...লেখা...
দেখেই বোঝা যাচ্ছিল হাতের লেখাটা একটা বাচ্চা হাতের।
বাবা বুকের মধ্যে আমাকে ধরে চুপ করে ছিল। অনেক্ষণ পরে বলল ‘জানো এখানে ২৭৩ বার বাবা লেখা আছে। তুমি কেবল লিখতে শুরু করেছিলে তখন। কলম হাতে দেওয়ার পর যেখানেই সুযোগ পেতে সেখানেই ছোট্ট করে বাবা শব্দটা লিখতে।
ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি ফেসবুকে লিখছি।
সরি আসলে বাবা নিয়ে লেখার সীমারেখাটা আমার জানা নেই হয়তো
থাক আর না লিখি আজ।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা।’