ব্যস্ততার মাঝেও গান

বাংলাদেশি লোকগানের জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজ। অডিওতে তাঁর প্রকাশিত অ্যালবামের সংখ্যা ৮০০-র কাছাকাছি। ১৯৯২ সালে প্রথম একসঙ্গে দুটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন তিনি। নাম বিচ্ছেদ সুপার ও খেলছে পাখি উল্টা কলে। আর মাঝি নামের শেষ অ্যালবামটি বেরিয়েছে গত বছর। চলচ্চিত্রে মমতাজ প্রথম গান করেন ১৯৯৮ সালে। মুজিব পরদেশির সুর ও সংগীতে দৌড় ছবিতে গানটি ব্যবহার করা হয়। এরপর অডিওর পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও সমান তালে গান গেয়েছেন তিনি। মমতাজের দাবি, চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যা হাজার খানেকের কম নয়। এবার সিনেমায় গান গেয়েও বাজিমাত করেছেন মমতাজ। অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৪-র সেরা গায়িকার সম্মান। নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ ছবিতে ‘নিশিপক্ষী’ গানটি গাওয়ার জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কথা হয় মমতাজের সঙ্গে। জানালেন, খুব ব্যস্ত। একটু পরই সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে হবে। পরদিন সকালে আবার কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
: অভিনন্দন আপনাকে।
: ধন্যবাদ।
: নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে?
: অসম্ভব ভালো লাগছে। এক জীবনে তো অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। এটি যেহেতু জাতীয় পুরস্কার, তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছেও ছিল। ভালো ভালো গানও গেয়েছি আমি। ভেবেছিলাম, হয়তো তখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাব। ছবির পরিচালক ও সংগীত পরিচালকেরাও আমাকে নিয়ে তেমনটা আশা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর পাওয়া হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল। যা-ই হোক, এবার পুরস্কার পেয়ে বেশি ভালো লাগছে। মানুষ কাজ করে, পরিশ্রম করে। আর এর স্বীকৃতি যদি জাতীয় পর্যায়ে পাওয়া যায়, তাহলে ভালো তো লাগবেই।
: প্রথম কবে মনে হয়েছিল আপনার এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল?
: এই যেমন নার্গিস আক্তারের চার সতীনের ঘর, সালাহ্উদ্দিন লাভলুর মোল্লাবাড়ির বউ। এ তো গেল আমাকে নিয়ে অন্যদের আশাবাদের কথা। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম মনপুরা ছবির ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু’ গানটি নিয়ে। আমার বিশ্বাস ছিল, গানটির জন্য জাতীয় পুরস্কার পাবই। এ ছাড়া তারেক মাসুদের মাটির ময়না ছবির ‘পাখিটা বন্দী আছে দেহের খাঁচায়’ গানটি নিয়েও আশা তৈরি হয়েছিল। এই দুটি ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলে বেশি ভালো লাগত।
: এবার সেই আক্ষেপ দূর হয়েছে?
: একবারে এই কষ্ট দূর হবে? আরও কয়েকবার পেলে হয়তো কিছুটা কমবে। আমার গাওয়া আরও কয়েকটি ভালো গান আছে। আমার বিশ্বাস, সামনে এই গানগুলো অবশ্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে।
একসময় এক ঈদেই গায়িকা মমতাজের আট-দশটি অ্যালবাম বের হতো। অথচ কয়েক বছর ধরে চিত্রটা বদলে গেছে। এখন একটি অ্যালবামের জন্য অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। মমতাজ এখন সাংসদ। নির্বাচনী এলাকায় তাঁকে নানা কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয়। এলাকাবাসীর যেকোনো বিপদ-আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
‘সময় অনেক কিছু বদলে দেয়। গত কয়েক বছর জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে। অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এ ছাড়া সিডি বের করার সঙ্গে সঙ্গে পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। লগ্নি করা অর্থ উঠে না এলে কোম্পানি অ্যালবাম বের করবে কীভাবে? তবে চিত্রটা একটু বদলেছে বলে মনে হচ্ছে। আমিও ভাবলাম নতুন গান দরকার। এখানে টাকাপয়সা মুখ্য নয়।’ বললেন মমতাজ।
মমতাজভক্তদের জন্য সুখবর হচ্ছে, তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের এই প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে অ্যালবাম প্রকাশের ব্যাপারে আলোচনা করেছে। মমতাজ বলেন, ‘স্টেজ শো আর রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় এসব বিষয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত করতে পারিনি। হয়তো একসঙ্গে কয়েকটি অ্যালবামের কাজ শুরু করব।’