
সরকারি অনুদান যখন পায়, জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ছবির নাম তখন ছিল রেইনকোট। তবে নির্মাণের সময়ই বদলে গেল নাম—হয়ে গেল মেঘমল্লার। অঞ্জনের সঙ্গে কথাবার্তার শুরুতে তাই প্রথম প্রশ্নটি ছিল, রেইনকোট কেন মেঘমল্লার হয়ে গেল?
‘কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প “রেইনকোট”-এর ছায়া অবলম্বনে সরকারি অনুদানের জন্য রেইনকোট নামে আমি চিত্রনাট্য জমা দিয়েছিলাম। ছবির কাজ শুরুর পর মনে হলো, এই নামে ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি ছবি আছে। আর ছবির জন্য আমরা একটি বাংলা নামও খুঁজছিলাম। তাছাড়া ছবির গল্পে আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বৃষ্টি মৌসুমের আবহ। এখানে মেঘমল্লার রাগও ব্যবহার করেছি আমরা। তাই শেষমেষ ছবির নাম হিসেবে মেঘমল্লারকেই বেছে নিয়েছি।’
গত সোমবার দুপুরবেলা। প্রথম আলো কার্যালয়ে অঞ্জনের মুখোমুখি আমরা। চায়ের সঙ্গে চলছে এন্তার কথা, সেসব কথার গন্তব্য কোথায়? শেষাবধি মেঘমল্লার-এ।
আচ্ছা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তো অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে। তাঁর ছবিতে নতুন আর কী উপস্থাপন করেছেন অঞ্জন?
প্রশ্নের দারুণ এক উত্তর বাতলালেন তিনি, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের যেসব ছবি দেখি, এর অধিকাংশতেই দেখা যায়, সেই যুদ্ধ, গোলাগুলি, নারী নির্যাতন—এগুলো মুক্তিযুদ্ধের সরল ইতিহাস। কিন্তু এর বাইরেও ইতিহাস আছে, ঘটনা আছে। সাধারণের সেই অনালোকিত গল্পকেই ছবিতে ধরতে চেয়েছি আমি।’
পরিচালকের এ কথার পর ‘রেইনকোট’-এর ছায়া নিয়ে বানানো মেঘমল্লার-এর খানিকটা তো বলতেই হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ষার টানা তিন দিনের কাহিনি নিয়ে গড়ে উঠেছে গল্পটি। এর কেন্দ্রে আছে কলেজশিক্ষক নূরুল হুদা, তার স্ত্রী আসমা, পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে সুধা ও আসমার ছোট ভাই মিন্টু। মিন্টু মুক্তিযুদ্ধে গেছে। এ কারণে এক ঘোর বর্ষণের দিনে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে গেল নূরুল হুদাকে। বৃষ্টির মধ্যে যাওয়ার সময় আসমা তাকে পরিয়ে দিল মিন্টুর ফেলে যাওয়া রেইনকোট। এরপর?
এরপরই রয়েছে মোচড়—সেনাক্যাম্পে বন্দী থাকার সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শুরু করল নূরুল হুদা। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে একসময় মরেও গেল সে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’-এর তো এখানেই সমাপ্তি; কিন্তু মেঘমল্লারও কি শেষ হলো এখানেই?
অঞ্জনের উত্তর, ‘না। “রেইনকোট” গল্পটি ধরেই আমরা আরেকটু এগিয়েছি। অল্প কথায় বলতে চেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের পরের গল্পও।’
সে গল্প আমরা না হয় আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে বসেই দেখব, শুনব। নির্মাতা জানালেন, আগামী ১৯ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ছবিটি। এর আগে ১১ নভেম্বর হবে উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এখন ছবিটি সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানিয়ে রাখি। এর শুটিং হয়েছে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ প্রসঙ্গে নির্মাতার ভাষ্য, ‘গোটা সিনেমায় আমরা চেয়েছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে। এখানে গল্পের প্রয়োজনে আমাদের দরকার ছিল পুরোনো একটি কলেজ ও তার পরিবেশ, পুরোনো আমলের গাড়ি। তাই এখানে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া যেহেতু বৃষ্টির দিনের গল্প, শুটিংয়ের জন্য সে কারণে আমরা বেছে নিয়েছিলাম বর্ষাকাল।’
বেঙ্গল ক্রিয়েশনস প্রযোজিত মেঘমল্লার-এ অভিনয় করেছেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, অর্পণা ঘোষ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, আমিনুর রহমান মুকুল, শিশুশিল্পী জারা, অদিতিসহ অনেকেই। সংগীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার অভিজিৎ বসু, চিত্রগ্রহণে ছিলেন মুম্বাইয়ের সুধীর পালসানে।
যত্নের কোনো কমতি ছিল না ছবিটি নির্মাণে—এটি বোঝা যায় অঞ্জনের কথাতেও, ‘কাহিনির প্রয়োজনে যা যা দরকার, ছবিতে তা-ই ব্যবহার করেছি আমরা। আমরা চেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন এক গল্প বলতে।’