
মুজিব পরদেশী। এক সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী। তাঁর রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তাঁর গান শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘সাদা দিলে কাদা’, ‘তোমায় আমি হলেম অচেনা’, ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি’, ‘আমার মনের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’—তাঁর গাওয়া এমনই অসংখ্য গান এখনো অনেককেই নস্টালজিক করবে। ফিরিয়ে নিয়ে যাবে তিন যুগ আগে। কিন্তু হঠাৎ তিনি চলে যান লন্ডনে। পুরো এক যুগ ছিলেন সেখানে। এখন তিনি দেশে ফিরেছেন। ৪ জানুয়ারি দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
কেমন আছেন?
এখন খুব ভালো। অনেক বছর পর দেশে ফিরেছি। পুরো এক যুগ পর।
এত বছর কোথায় ছিলেন?
লন্ডনে। আমার বাসা ছিল বার্মিংহামে।
দেশে কবে এসেছেন?
মাস খানেক হলো। সঙ্গে আমার স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরাও এসেছে।
ওখানে কী করেছেন?
আমি গানের মানুষ, গান নিয়েই ছিলাম। আর কিছু করতে পারিনি। বাসার নিচে একটা রুমে গান শেখাতাম। অনেকে আসতেন। শ খানেক ছাত্রছাত্রী ছিলেন। কয়েকটা ব্যাচ হতো। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করেছি।
কী ধরনের গান শেখাতেন?
শাস্ত্রীয় সংগীত। আধুনিক গানও শেখাতাম।
সবাই কিন্তু জানেন আপনি লোকগানের শিল্পী।
হ্যাঁ। এর পেছনে একটা ছোট্ট গল্প আছে। আমার বাবা গিয়েছিলেন পাকিস্তানের করাচিতে। তিনি সেখানে ব্যবসা করতেন। আমার জন্ম সেখানেই। ১৯৬৫ সালে আমরা ঢাকায় চলে আসি। তখন আমার বয়স ১১। আমার দাদার বাড়ি কিন্তু মুন্সিগঞ্জে। করাচিতে আমি প্রথম তবলা শিখেছি ওস্তাদ আশিক আলীর কাছে। এরপর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিই। শাস্ত্রীয় সংগীতে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল ওস্তাদ গোলাম হায়দার আলী খানের কাছে। দেশে এসে ওস্তাদ ফজলুল হক আর ওস্তাদ আমানউল্লাহ খানের কাছে দীর্ঘদিন তালিম নিয়েছি। আর তবলা চর্চা করেছি ওস্তাদ মনির হোসেন খানের কাছে।
লোকগানের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে?
লোকগানের ব্যাপারে আমার তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। লোকগানের প্রখ্যাত শিল্পী আবদুল আলীমের গান শোনার পর এই সুর আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। আমার মামা ছিলেন আবদুল আলীমের বন্ধু। মামা আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যান। সময়টা ছিল ১৯৬৫ সাল। তখন আবদুল আলীম থাকতেন কমলাপুরে কবি জসীমউদ্দীনের বাসায়। এরপর অনেক বছর আমি আবদুল আলীমের সঙ্গে তবলা বাজিয়েছি।
আর লোকগানের শিল্পী কীভাবে হলেন?
তখন থেকেই আমি লোকগান গাইছি। আমি আরেকটি কাজ করেছি, শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে লোকসুর মিলিয়ে আলাদা কিছু তৈরি করতে চেয়েছি। লোকগানকে আরও প্রাণবন্ত করতে চেয়েছি। আমার নিরীক্ষা শ্রোতাদের পছন্দ হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো আমার অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। সেগুলোর অসংখ্য কপি বিক্রি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন?
কলকাতায়। আমি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ছিলাম। এ ছাড়া মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে আমরা তাঁদের গান শুনিয়েছি।
লন্ডনে আবার কবে ফিরে যাবেন?
আর যাব না। দেশেই থাকব। ভেবেছিলাম, মুজিব পরদেশীকে কেউ মনে রাখেনি। ‘মুজিব পরদেশীর গান’ বলে এখন আর কিছু নেই। দেখছি আমার ধারণা ভুল, এ সময়ের মানুষ আমাকে মনে রেখেছে।
এখন কোনো কাজ করছেন?
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর একটি বিজ্ঞাপনে আমাকে দিয়ে গান করিয়েছেন। ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিকেতনে অর্ণবের স্টুডিওতে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছি। সামনে আরও অনেক নতুন গান করব। টিভি চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠান করব।
আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ।