রাহশানের স্বপ্নে বাংলাদেশ

বাঙালি বিউটি রাহশান ও টয়া
বাঙালি বিউটি রাহশান ও টয়া

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বড় হয়েছেন রাহশান নূর। প্রকৌশলী বাবা ও চিকিৎসক মা জীবিকার প্রয়োজনে বিদেশ পাড়ি দিলেও তাঁদের অন্তরজুড়ে ছিল বাংলাদেশ। তাই সেখানকার বাঙালিদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি কালচারাল ক্লাব। ক্লাবের অনুষ্ঠানের মঞ্চে একরকম জোর করেই তাঁরা তুলে দিতেন ছোট্ট রাহশানকে। উপলক্ষ হতো কবিতা কিংবা অভিনয়। এই করতে করতেই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন রাহশান। বাংলা বলেনও বেশ ভালো। প্রবাসী বাঙালি এই তরুণের স্বপ্ন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে যাওয়া। তাই তো এরই মধ্যে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় ও পরিচালনা করেছেন তিনি। এবার তিনি নিয়ে আসছেন নিজের অভিনীত ও পরিচালিত ছবি বাঙালিবিউটি

রাহশান
রাহশান

রাহশান পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়ে, প্রধান বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ পর্যায়ে খেলেছেন বাস্কেটবলও। কিন্তু স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত হবেন। বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ধানমন্ডির একটি স্কুলের জন্য টাকা তুলতে আনাড়ি হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা। বানিয়ে ফেলেন একটি ছবি কিংসঅবডিভান। ছবির পাত্রপাত্রীরা পরিবার কিংবা বন্ধুজন। কিন্তু ছবি তো সিনেমা হলে চলার জিনিস। আনাড়ি হাতের কাজটি দেখানোর জন্য পরিবেশকও পেয়ে গেলেন রাহশান। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে সেই ছবি চলল। সেখান থেকে টাকা গেল স্কুলটিতে। এরপর রাহশানের মাথায় চলচ্চিত্র ভর করল যেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন ধারার ছবিতে তিনি অভিনয় করলেন। নাম প্রমিসল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের নিয়ে ছিল এই ছবি। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় রাহশান অভিনীত বাংলা ছবি সীমানাহীন। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় ইংরেজি ছবি দ্যস্পেকটেকুলারজিহাদঅবট্যাজরহিম। এ ছবিতে ধোবিঘাট, রকঅন ছবিখ্যাত মনিকা ডোগরা অভিনয় করেছিলেন রাহশানের সঙ্গে। এরপর কার্সঅবদ্যকোহিনূরনামের একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন রাহশান নূর।

বিভিন্ন ভাষার ছবিতে অভিনয় করলেও বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গেই একাত্মবোধ করেন নূর। তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত নতুন ছবি বাঙালিবিউটি। প্রথম আলো কার্যালয়ে রাহশান নূরকে জিজ্ঞেস করি, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পরিমণ্ডলে আপনার যোগাযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গল্প নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন কেন? রাহশান হেসে উত্তর দেন, ‘আমি আমার গল্প বলতে চাই। আসলে কি জানেন তো, শিকড় ভুলে কিছু হয় না। নিজের পরিচয়ে পরিচিত না হতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন না। আর বাংলাদেশের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা পৃথিবীর কাছে তুলে কেন আমরা ধরব না?’ রাহশানের নতুন ছবি বাঙালিবিউটিএকটি ভালোবাসার গল্প। সত্তরের দশকের ঢাকার গল্প। এ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। রাহশান বলেন, ‘আমি আমার বাবাদের জীবন তুলে ধরতে চেয়েছি। তারা কীভাবে কাপড়চোপড় পরত, তারা কীভাবে প্রেম করত, তাদের সংস্কৃতি কেমন ছিল, সেগুলো আছে এই ছবিতে।’ সত্তরের ওই ঢাকাকে ফুটিয়ে তুলতে কষ্ট হয়নি? রাহশান বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান ঢাকা শহরে এখনো এমন অনেক স্থাপনা আছে, যেগুলো খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া ভিএফএক্স প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও আগের ঢাকাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি আমরা।’ ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও দুবাইয়ে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ৮ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে কবে মুক্তি দেওয়া হবে, সেটা ঠিক হবে ছবিটি সেন্সর পাওয়ার পর। রাহশান নূর পরিচালিত ও অভিনীত এই ছবিতে আরও অভিনয় করছেন মুমতাহিনা টয়া, সারা আওম, আশফাক রিজওয়ান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম বশির, জি এম শহীদুল আলম, নায়লা আজাদ প্রমুখ। রাহশান বলেন, ‘পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ এখনো দুর্ভোগের দেশ, দুর্যোগের দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ তো অনেক সুন্দরও। সেই বিউটিফুল বাংলাদেশ নিয়ে বাঙালিবিউটি।’ রাহশান আরও বলেন, তাঁর ইচ্ছা আছে আস্তে আস্তে করে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রডাকশন নিয়ে আসার। হলিউড মানের কাজ বাংলাদেশে হবে, এই স্বপ্ন দেখেন তিনি।