>সব চ্যানেল নিয়মিত প্রচার করছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের বার্তা। তাদের অনুষ্ঠানগুলো সাজাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর ও দেশপ্রেমের নানা বার্তা দিয়ে। সপ্তাহ ঘুরে টিভি সমালোচনা লিখেছেন আবু রইস

আশা-হতাশার দোদুল্যমানতায় দুলছে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো। সেসব নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, এমনকি আন্দোলন। তেমনি একটি অনুষ্ঠান দিয়ে আমরা আজকের আলোচনা শুরু করব।
৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে চ্যানেল আইতে সরাসরি সম্প্রচারিত হলো ‘বিবিসি প্রবাহ’। এবারে মূল প্রতিবেদন ছিল নারী পাচার। বর্তমানে এটি আমাদের অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যা। বিদেশে কীভাবে নারী পাচার হচ্ছে, কীভাবে তারা অসম্মান ও মানবেতর জীবনের মুখোমুখি হচ্ছে, তা-ও উঠে এসেছে পাচারকারী ও উদ্ধার করা নারীদের সাক্ষাৎকারে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি নিয়ে অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট সালমা আলী। আর নারী পাচার প্রতিরোধে সরকারের অবস্থান ও কর্মসূচি কী, তা ব্যাখ্যা করেন একজন অতিথি। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে রোহিঙ্গা নারীদের অবস্থা-অবস্থান নিয়েও একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদন তুলে ধরেন ফারহানা পারভীন।
৯ ডিসেম্বর রাত ১১টায় বৈশাখী টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হলো গানের অনুষ্ঠান ‘সময় কাটুক গানে গানে’। প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির এ অনুষ্ঠানে দলীয় পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল ‘গান পাগল’ দলটি। গান শোনান দলের প্রধান শিল্পী শোয়েব। বৈচিত্র্যময় ছিল তাঁর পরিবেশনা। আধুনিক থেকে শুরু করে লোকসংগীত, উপজাতীয় ভাষার গান, নৌকাবাইচের গান, এমনকি ভৈরোঁ রাগাশ্রিত একটি গানও পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষ করেন রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে—‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। তাঁর কণ্ঠ একটু হালকা, তবে মিষ্টি ও সুরেলা। উপস্থাপনা সরল ও সাবলীল। গানের পাশাপাশি তাঁর কথা, অভিব্যক্তি ও উপস্থাপনা শুনে মনে হয়েছে, তিনি সত্যিই গানপাগল।
৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বাংলাভিশনেও ‘সকাল বেলার রোদ্দুর’ অনুষ্ঠানে সরাসরি গান পরিবেশন করেন শিল্পী শোয়েব। সেখানে তাঁর পরিবেশনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে তিনি অধিকাংশই পরিবেশন করেন ওপার বাংলার বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া পুরোনো দিনের জনপ্রিয় গান।
৯ ডিসেম্বর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি মন জানালা। দিলারা হাশেমের বিখ্যাত উপন্যাস ঘর মন জানালা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে টেলিছবিটি। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন নজরুল ইসলাম।
জয়া ও মায়া দুই বোন আর মাকে নিয়ে তাদের পরিবার। জয়ার চাকরি পাওয়া দিয়ে গল্পের শুরু। ইমরানের সহায়তায় সে চাকরি পায়, কিন্তু ভালোবাসে সামির নামের চিত্রশিল্পীকে। ঘটনাক্রমে ছোট বোন মায়া তার প্রেমিক দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মায়া যখন আত্মহত্যায় উদ্যত, তখন জয়া তাকে বাঁচায় ও পুরো ঘটনা জানে। অতঃপর জয়া নিজের প্রেমিক সামিরকে অনুরোধ করে মায়ার সঙ্গে বিয়ে দেয়। তারপর ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে জয়া। ইমরান তাকে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু তা-ও সে মেনে নিতে পারে না। শেষে সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায় মায়া। সামির সন্তানের পিতৃপরিচয় দিয়ে দূরে চলে যায়। আর জয়া উদ্ভ্রান্ত হয়ে মাথা কুটে শূন্য গৃহকোণে।
গল্পটি একটু পুরোনো ধাঁচের হলেও সিনেমাটিক। তারিন, অপূর্ব, শর্মিলী, শিমুল ও কুমকুম হাসানের অভিনয় ছিল চরিত্রানুগ। চিত্রনাট্য এবং সংলাপও আকর্ষণীয়। তবে মাঝে মাঝে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত মেঘে ঢাকা তারার গল্পের যেন কিছুটা ছায়াপাত ঘটেছে।
৯ ডিসেম্বর রাত ১১টায় বিজয়ের মাস উপলক্ষে এটিএন-এ প্রচারিত হলো জাকির হোসেনের রচনা ও শান্ত রহমানের পরিচালনায় নাটক বীরঙ্গনার কথা। কিন্তু শব্দটি বীরঙ্গনা নয়, বীরাঙ্গনা। বীরাঙ্গনার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারিন। একাত্তরের পর দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরে ‘রেডিও ধ্বনি’-তে এক সাক্ষাৎকারে সে একে একে তুলে ধরে তার বীরাঙ্গনা হওয়ার বিবরণ। আর সেই বিবরণের ফাঁকে ফাঁকে চলে দৃশ্যায়ন ও অভিনয়।
মুক্তিযুদ্ধের গতানুগতিক ও মুখস্থ গল্প এবং দুর্বল চিত্রনাট্য ও দুর্বল অভিনয়ের কারণে এটি না হয়েছে নাটক, না হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র। তবে শেষ দৃশ্যটিতে নাটকীয় গুণ ও তারিনের অভিনয় দর্শকের কিছুটা হৃদয় স্পর্শ করেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এবং বীরাঙ্গনাদের প্রতি সম্মাননার উদ্দেশ্যে এমন দুর্বল আর দায়সারা উপস্থাপনা ও পরিবেশনা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। ভবিষ্যতে বিষয়টি অনুষ্ঠান নির্মাতা ও বিভিন্ন চ্যানেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন ও বাস্তবায়ন করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।