শহীদ কাদরী ছিলেন আদ্যন্ত নাগরিক কবি

ছিল বক্তৃতা অনুষ্ঠান। সোমবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ফ্রান্সের ইনালকো ( Institut National des Langues et Civilisations), প্যারিস -এর শিক্ষক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক জেরেমিক কড্রন ‘সোনার বাংলা: ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও দেশভাগের দায়ভার’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন—এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু গতকাল রোববার না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি শহীদ কাদরী। তাঁর চলে যাওয়ার বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বাংলা একাডেমির আয়োজনটি শুরুটা হয় শোক দিয়ে।
সোমবার অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত প্রখ্যাত কবি শহীদ কাদরীকে স্মরণ করা হয় ‘শহীদ কাদরীর জন্য শোকগাঁথা’ শিরোনামে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আধুনিক বাংলা কবিতায় কাদরী যে স্বতন্ত্র ও সম্ভ্রান্ত রুচির পরিচয় দিয়েছেন তা বিস্ময়কর। আধুনিক মানুষের জীবনের নৈঃসঙ্গ্য চেতনা, অনিকেতবোধ ইত্যাদি তিনি সর্বসাম্প্রতিক শিল্পরীতিতে কবিতাকলার বিষয় করে নিয়েছেন। তিনি জানান, আগামী ৩১ আগস্ট বুধবার শহীদ কাদরীর মরদেহ বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
শহীদ কাদরীর কবিতা নিয়ে মূল্যায়নমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অনু হোসেন বলেন, শহীদ কাদরী ছিলেন আদ্যন্ত নাগরিক কবি। কবিতা নির্মাণের প্রকরণে পশ্চিমা শিল্পরীতির আশ্রয় গ্রহণ করলেও বিষয় নির্বাচনে তিনি সব সময়ই ছিলেন বাংলার মানুষ ও নিসর্গের প্রতি ভালোবাসায় ব্যাকুল।
অনুষ্ঠানের এ পর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্ত হত্যাকাণ্ডে বিষয়ে রচিত শহীদ কাদরীর কবিতা হন্তারকদের প্রতি পাঠ করেন রামেন্দু মজুমদার। একই কবিতার ইংরেজি ভাষ্য পাঠ করেন সোনিয়া নিশাত আমিন।
সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ কাদরী তাঁর সমকালীন কবিদের চেয়ে কাব্যবিশ্বে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন স্বতন্ত্র। দীর্ঘ প্রবাস-জীবনের শেষদিকের কবিতায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় স্বদেশের জন্য তাঁর আকুল হাহাকার।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি ও সাংসদ কাজী রোজী, আবুল হাসনাত, মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত বক্তা ফরাসি গবেষক জেরেমিক কড্রন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, সোনার বাংলা ধারণাটি হঠাৎ আবেগপ্রসূত ধারণা-মাত্র নয়। বাংলার বিস্তৃত ইতিহাসে এর গভীর প্রেক্ষাপট নিহিত আছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, জাতীয়তাবাদী অভিঘাত এবং মানুষের মুক্তির আন্দোলনে যে ভাবগত পাটাতন নির্মিতি পেয়েছে তার ভেতর স্বতন্ত্র স্বাধীন ভূখণ্ডে প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বাঙালিরা নানা মাধ্যমে তাদের আকুতি ব্যক্ত করেছে।