শুরু হচ্ছে শিশু-কিশোরদের বড় উৎসব

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন পান্না কায়সার
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন পান্না কায়সার

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৭’। তিন দিনের এ উৎসবে সারা দেশ থেকে যোগ দেবে খেলাঘরের ৫৮টি শাখার বন্ধুরা। তাদের পরিবেশনায় থাকবে ছড়াগান, দেশাত্মবোধক গান, লোকসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, গণসংগীত, আবৃত্তি, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য ও একক অভিনয়। আজ মঙ্গলবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উৎসব উদ্বোধন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কবি নির্মলেন্দু গুণ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে থাকবে শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান অতিথি থাকবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। পরদিন শনিবার সকালেও থাকবে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। বিকেলে আলোচনা ও বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার বিতরণ করবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি থাকবেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ এবং শিল্পী মিতা হক। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খেলাঘর-এর শিশু-কিশোর বন্ধুরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্না কায়সার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি খেলাঘরের উপদেষ্টা গোলাম কুদ্দুছ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, সায়েরা বেগম, শমী কায়সার প্রমুখ।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে শিশু সংগঠনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। একে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে এই বিনিয়োগও কাজে দেবে।’ পান্না কায়সার বলেন, ‘যে চেতনা নিয়ে আমরা খেলাঘর আন্দোলন শুরু করেছিলাম সেই চেতনার স্ফুরণ শাখায় শাখায় জেলায় জেলায় ছড়িয়ে যাক। আমাদের লক্ষ্য শুধু উৎসব নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা যাবে না।’
দেশের শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য ৬৩ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম এ শিশু-কিশোর সংগঠনটি। ১৯৫২ সালের ২ মে যাত্রা শুরু করে খেলাঘর। দেশের শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমনা, সুশিক্ষিত, সুস্থ-সবল শরীর গঠন ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে খেলাঘর আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। কবি হাবিবুর রহমান, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার, রণেশ দাস গুপ্ত, সত্যেন সেন, পটুয়া কামরুল হাসান, শহীদ জহির রায়হান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, সাংবাদিক বজলুর রহমান প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিরা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা।
দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি শিশু অধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়নে সংগঠনটি রেখেছে গৌরবজনক ভূমিকা। বর্তমানে দেশব্যাপী সাড়ে ছয় শতাধিক শাখা সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে খেলাঘর। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ করে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুরোপুরিভাবে সংযোজন এবং নতুন অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক একমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া।
‘খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৭’ উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি পান্না কায়সারকে চেয়ারম্যান, নিরঞ্জন অধিকারী, প্রণয় সাহা ও শমী কায়সারকে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশকে আহ্বায়ক এবং সহসাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবুকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে উত্সব উদ্‌যাপন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও গঠিত হয়েছে ১২টি উপ-পরিষদ।