সালমানের বিয়ে না করার সম্ভাব্য পাঁচ কারণ

বলিউডের অবিবাহিত তারকা-অভিনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর হচ্ছেন ‘মুঝসে শাদি করোগি’ তারকা সালমান খান। ৪৮ বছর পেরিয়েও এখন পর্যন্ত বিয়ের পথ মাড়াননি খান সাহেব। অবশ্য একের পর এক সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে বলিউডে বিরল নজিরই গড়েছেন তিনি। সালমান কেন বিয়ে করছেন না, তা জানার জন্য আগ্রহের কমতি নেই তাঁর অগণিত ভক্তের। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে সালমান বিয়ে না করার পেছনে সম্ভাব্য পাঁচ কারণের কথা বলা হয়েছে।
মামলা ও সাজা নিয়ে শঙ্কা...
১৯৯৯ সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের সময় বিরল প্রজাতির ব্ল্যাকবাক হরিণ শিকার করায় সালমানের বিরুদ্ধে যোধপুরে মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০০২ সালে তাঁর গাড়ির নিচে চাপা পড়ে একজন মারা গেলে গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে মুম্বাইয়ে আরেকটি মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর ধরে মামলা দুটির বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত জেলের ঘানি টানতে হতে পারে তাঁকে। আদালত চূড়ান্ত রায় না দেওয়া পর্যন্ত সালমানের বিয়ে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সালমান নিজেও এমনটা জানিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ছিল, ‘আমার বিয়ের বিষয়টি নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর। আদালতের রায় আমার বিরুদ্ধে গেলে জেল খাটতে হবে। সাজা শেষ করে তবেই বিয়ের কথা ভাবতে পারব। আদালতের রায়ের আগে বিয়ে করাটা তাই ঠিক হবে না।’
আদর্শ জীবনসঙ্গীর অপেক্ষায়...
বলিউডের অভিনেত্রী সংগীতা বিজলানি, ঐশ্বরিয়া রাই, ক্যাটরিনা কাইফ, অসিন, স্নেহা উলাল, মেহেক চাহাল, জেরিন খানের পাশাপাশি একাধিক বিদেশিনির সঙ্গে সালমানের প্রেমের খবর নিয়ে বহুবার শোরগোল উঠেছে বলিউডে। সালমানের বিদেশিনি প্রেমিকার তালিকায় আছে সোমি আলী, ব্রুনা আবদুল্লাহ, ক্লদিয়া সিজলা, হ্যাজেল কিচ, ইলুলিয়া ভেঞ্চুর ও এলি আবরামের নাম। কিন্তু কারও সঙ্গেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারেননি সালমান। বরাবরই বিয়ে সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেছেন, আদর্শ জীবনসঙ্গীর সন্ধান পাওয়ার পরই কেবল বিয়ের কাজটি সারবেন তিনি। সালমান তাঁর জীবনের জন্য ‘মিস পারফেক্ট’ খুঁজে না পাওয়াটা তাঁর বিয়ে না করার অন্যতম কারণ হতে পারে। কবে তিনি আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবেন—বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সালমান-ভক্তদের মাথায়।
ভাতিজা-ভাতিজিদের নিজের সন্তান মনে করা...

সুন্দর মনের অধিকারী হিসেবে সুনাম আছে সালমানের। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ভাতিজা এবং ভাতিজিরা তাঁর নিজেরই সন্তান। সালমান মনে করেন, মানুষ বিয়ে করে সন্তান পাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি তো সন্তান পেয়েই গেছেন। কাজেই বিয়েটা খুব বেশি জরুরি নয় তাঁর কাছে।
চিরতারুণ্য...
জীবনের ৪৮টি বছর পার করলেও সালমানকে দেখে কিন্তু মোটেও এত বেশি বয়সী মনে হয় না। বয়সকে যেন হার মানিয়েছেন তিনি। এখনো তাঁর পেশিবহুল শরীর দেখে যুবক বলেই মনে হয় তাঁকে। সালমানের শরীর কিংবা মনে বয়সের এতটুকু ছাপও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখনো বলিউডের অন্যতম আকর্ষণীয় অভিনেতা হিসেবে বিবেচিত তিনি। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তাও যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে বলিউডের অন্যতম সফল তারকা অভিনেতা হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। সমবয়সী সহ-অভিনেত্রীদের বয়স নিয়ে ঠাট্টা-মশকরাও করতে দেখা গেছে তাঁকে। একবার তিনি এক সাক্ষাত্কারে মজা করে বলেছিলেন, ‘আমি এ বছরই বিয়ে করছি এবং সামনের প্রতিটি বছরেই আমি একই কথা বলে যাব।’

সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমিরের কথা না শোনা...
বলিউডে সালমানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ তারকা আমির খান। বহুবার সালমানকে বিয়ে করে থিতু হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আমির। কিন্তু প্রিয় বন্ধুটির কথা কানেই তোলেননি খান সাহেব। সালমানকে আমির বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, অনেক মেয়েই সালমানকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। সেসব মেয়ের মধ্য থেকে একজনকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করার জন্য সালমানকে বারবার অনুরোধ করেছেন আমির। কিন্তু প্রতিবারই আমিরের অনুরোধ এড়িয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করেছেন খান সাহেব। কখনোই আমিরের অনুরোধে বিচলিত বোধ করেননি সালমান। মোদ্দা কথা হলো, আমির শত চেষ্টা করেও সালমানকে বিয়ের বন্ধনে বাঁধতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেকোনো উপায়ে তিনি সফল হলে আজ হয়তো ঠিকই সংসার ধর্ম পালন করতেন ‘দাবাং’ তারকা সালমান খান।
অগণিত সালমান-ভক্তের ইচ্ছে দ্রুত বিয়ে করে থিতু হন তিনি। কিন্তু বরাবরই তিনি বিয়ে নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন। আশাজাগানিয়া বিষয় হলো, হঠাত্ করেই সুর পাল্টেছেন সালমান। সম্প্রতি মিডিয়ার সঙ্গে নিজের বিয়ে নিয়ে আলাপচারিতার সময় খুব শিগগির চূড়ান্ত একটি পদক্ষেপ নেবেন বলেই আভাস দিয়েছেন এ তারকা অভিনেতা।
এ প্রসঙ্গে সালমানের ভাষ্য, ‘বর্তমানে আমার জীবনে একপর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে উত্তরণের মধ্যবর্তী সময় চলছে। বিষয়টিকে আমি দারুণ উপভোগ করছি। ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে আজ অবধি আমার জীবনে কখনোই এমন সময় আসেনি। জীবনে প্রথমবারের মতো এত বেশি দীর্ঘশ্বাস ফেলছি আমি। আড়াই বছর আগেও আমার দীর্ঘশ্বাস ফেলার মাত্রা এতটা প্রবল ছিল না। কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলা বন্ধ করার সময় এসে গেছে। কারণ খুব শিগগির আমার জীবনে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।’
সালমান আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন পাঠান, আর মা হিন্দু। দ্বিতীয় মা বার্মিজ ক্যাথলিক। ভাবি পাঞ্জাবি। আমি নিজের জন্য দেশের বাইরে থেকেই বউ আনার চিন্তা-ভাবনা করছি।’
দেরিতে হলেও বিয়ে নিয়ে সালমানের অনীহা কেটে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে সালমান-ভক্তদের জন্য অনেক বেশি আনন্দের। হুট করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ভক্তদের আনন্দকে তিনি মাটি করে দেবেন না—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।