সুমন থেকে আশফাক

এ বি এম সুমন। ছবি: আনন্দ
এ বি এম সুমন। ছবি: আনন্দ

‘দর্শকেরা আশফাক হিসেবেই চিনছে আমাকে, সুমন নয়। ছবিতে আমার চরিত্রটি যেন বাস্তব রূপ পেয়েছ। এটিই আমার বেশি ভালো লাগা।’ বলছিলেন ঢাকা অ্যাটাক ছবির আশফাক চরিত্রের এ বি এম সুমন।

গত দুই মাসজুড়ে বাংলাদেশ তো বটেই, দেশের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাংলাভাষী দর্শকের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে দীপংকর দীপনের ঢাকা অ্যাটাক। ছবিটিতে অভিনয় করে যে কটি চরিত্র আলোচনায় এসেছে, তাদের অন্যতম এসি আশফাক। পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াতের প্রধান। সেই চরিত্রে অভিনয় করে এ বি এম সুমনের এখন পোয়াবারো! আছেন দারুণ ফুরফুরে মেজাজে। ছবিতে তাঁর সফলতার গল্প শোনাতে সম্প্রতি প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসেছিলেন এই অভিনেতা। ছবি তোলার পালা শেষ করে বললেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক ছবি নিয়ে দারুণ সময় উপভোগ করছি।’

ছবিটির শো চলাকালে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে যান সুমন। তাঁর সে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘সবাই সারিবদ্ধ হয়ে সিনেমাটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকছেন। ঢোকার সময় হলের বাইরে আমাকে চিনতে না পারলেও সিনেমা দেখা শেষে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোনোর মুখে দূর থেকে দেখে আশফাক, আশফাক বলে চিত্কার করছেন। তারপর সেলফি তুলছেন। কী যে ভালো লাগছে! সত্যি কথা কি, সুমনকে নয়, ছবির চরিত্র আশফাককে সবাই চিনছেন, এটাই আমার অভিনয়ের বড় প্রাপ্তি।’

ছবিটির এই সফলতার পেছনে দর্শকের ভূমিকাকে সঙ্গে রাখলেন তিনি। সুমন বলেন, ‘একজন দর্শক একাধিকবার ছবিটি দেখার খবরও পাচ্ছি আমরা। শুধু তা-ই নয়, দর্শকেরা ছবিটি দেখে অন্যদেরও ছবিটি দেখতে উৎসাহিত করছেন।’

এই ছবিটিতে কাজের সুযোগ হলো কীভাবে? জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পরিচালক ও আমার মিটিং হয়। কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না যে কাজটি করছি। এর মাস দু-এক পর হঠাৎ করেই ডাক এল কাজটি করার জন্য। এরপর চুক্তিবদ্ধ হলাম।’

ছবির আশফাক চরিত্রটি তুলে আনাটা অতটা সহজ ছিল না। নতুন এই চরিত্রটির প্রস্তুতির জন্যও তাঁকে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বলে জানান সুমন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের এই বিশেষ বাহিনীর প্রধান চরিত্রটি করতে প্রশিক্ষিত হয়েই শুটিংয়ের মাঠে নামতে হয়েছে। এ জন্য পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এ ছাড়া ছবির গল্পকার সানি সানোয়ারসহ পুলিশের বিভিন্ন শাখার সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে।’ সুমন জানান, ছবিতে তাঁর দলের আটজনই সত্যিকারের সোয়াতের সদস্য ছিলেন।

ছবিটি সাড়া ফেলার পেছনে পুলিশের বিশেষ কয়েকটি বাহিনীর বড় ভূমিকার কথা জানান তিনি। এই অভিনেতা বলেন, ‘ছবির লোকেশন, অস্ত্র, পোশাকসহ বেশির ভাগ অবকাঠামোগত সহযোগিতা এসেছে পুলিশের বিভিন্ন বিশেষ বাহিনী থেকে। ফলে দর্শকের কাছে কাজটি ঝকঝকে, তকতকে মনে হয়েছে। অনেক কিছুতে নতুনত্ব পেয়েছেন দর্শকেরা।’

ছবিটির শুটিংয়ের সময় কতই না অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এই অভিনেতার। বান্দরবানের পাহাড়ে একটি অপারেশনের দৃশ্যে অভিনয় করার সময়কার একটি অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। বলেন, ‘শত্রুদের লক্ষ্য করে সোয়াত টিম গুলি করছে। আমি পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে গুলি করছি। কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে গেছি যে পা পিছলে গেলেই নিচে পড়ে শেষ! পরে খেয়াল হলে সে যাত্রায় বেঁচে যাই।’

২০১২ সালে মডেলিংয়ের মাধ্যমে মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন সুমন। পরে দু-একটি নাটকেও অভিনয় করেন। এরপর ২০১৫ সালে অচেনা হৃদয় ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখান। পরপরই রুদ্র নামে আরও একটি ছবি মুক্তি পায় তাঁর। তবে দুটি ছবি থেকেই তেমন একটি সাড়া পাননি সুমন। ২০১৭-তে এসে ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় চলে আসেন এই অভিনেতা।

সুমন জানান, আরও তিনটি ছবি হাতে। আদি ছবির কাজ শেষ। বিউটি সার্কাস, ভ্রমর—এই দুটি ছবির শুটিং চলছে।

চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘অভিনয় নিয়েই আপাতত থাকতে চাই। বেছে বেছে বছরে তিন-চারটা ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা।’

তবে চলচ্চিত্রে অভিনয় নয়, পেশা হিসেবে যেকোনো ব্যবসা বেছে নেবেন বলেন জানান বড় পর্দার এই অভিনেতা।