স্মৃতিতে মিঠু...

>

গহীনে শব্দ ছবিতে অভিনয় করেছেন কুসুম শিকদার। আর জোনাকির আলোয় বিদ্যা সিনহা মিম। নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত এই দুটি ছবিকে ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি এই দুই অভিনেত্রীর মনে। মিঠুকে নিয়ে তাঁদের কিছু স্মৃতি জানালেন প্রথম আলোকে

কুসুম শিকদার
কুসুম শিকদার

কুসুম শিকদার
২০০০ সাল। আমি তখন গান করি। চ্যানেল আই মিউজিক ভিডিও বানানোর উদ্যোগ নেয়। আমার গাওয়া ‘কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে’গানের সেই ভিডিওর নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু। গাজীপুরে গানটির শুটিং করা হয়। এত চমৎকারভাবে শট নিচ্ছিলেন, মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
এরপর অনেক দিন মিঠু ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে তাঁর চিত্রকর্ম আমার দারুণ পছন্দ ছিল। তাঁর বাসায় দেয়ালে টাঙানো একটি চিত্রকর্ম আমার বেশ ভালো লেগে যায়। কোনো কিছু না ভেবে আমি তা মিঠু ভাইয়ের কাছে চেয়ে বসি। দেবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। শুনেছি, ওই ছবিটি নাকি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। এর কিছুদিন পর খুব সুন্দর করে মোড়ানো অবস্থায় সেই চিত্রকর্মটাই আমার বাসায় পাঠিয়ে দেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে এমন একটি উপহার পেয়ে রীতিমতো অবাক হই। সেই ছবিটি এখনো আমার বাসার দেয়ালে ঝোলানো আছে।

খালিদ মাহমুদ মিঠু
খালিদ মাহমুদ মিঠু


২০০৯ সালে গহীনে শব্দ ছবির শুটিং করতে রাঙামাটি যাই। শুটিংয়ের ফাঁকে হঠাৎ দেখি তেলাপোকা। আমি তো ভয়ে অস্থির। বললাম তেলাপোকাটা মেরে ফেলতে। কিন্তু মিঠু ভাই বললেন সরিয়ে দিতে। তারপর বললেন, ‘পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর উপকারিতা ও ভূমিকা আছে। তাই এসব মেরে ফেলা বা ধ্বংস করা উচিত না।’ যে মানুষটির প্রকৃতি ও প্রাণীর ব্যাপারে এতটা ভালোবাসা ছিল, সেই মানুষটির মৃত্যু হয়েছে গাছচাপা পড়ে! মানতেই কষ্ট হচ্ছে।
মিম
গহীনে শব্দ ছবিটির কারণেই খালিদ মাহমুদ মিঠুকে আমি চিনেছি। তাঁর সেই কাজটি দেখে আমি মুগ্ধও হয়েছি। ২০১২ সালে সেই মানুষটির সঙ্গে তাঁর জোনাকির আলো ছবিটি দিয়ে আলাপ শুরু হয়! চ্যানেল আইয়ের হাসান ভাই (ইবনে হাসান খান) আমাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর একদিন আমি তাঁর সঙ্গে চ্যানেল আইতে কথা বলি। গল্পটি শোনালেন। আমার পছন্দও হলো। শুটিংয়ের দিনক্ষণও ঠিক। এর মধ্যে আমাদের প্রায়ই কথা হতো। আমি তাঁকে মামা ডাকা শুরু করি।

মিম
মিম

জোনাকির আলো ছবির জন্য আমাদের যেতে হলো সেন্ট মার্টিনে। শুটিংয়ের সময় আবহাওয়াটা খুব খারাপ ছিল। শেষ পর্যন্ত লোকেশন বদলাতে বাধ্য হন পরিচালক। ট্রলারে টেকনাফ চলে আসি। আসার পথে আমি ট্রলারে মারা যাওয়ার ভয়ে কান্না করছিলাম। আর মিঠু মামা ও তাঁর ছেলে আর্য্য আমাকে নিয়ে মজা করছিলেন। ওই দিনের কথাগুলো মনে পড়লে খুব কষ্ট লাগে।
মিঠু মামার ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আমাদের মধ্যে কথা ছিল, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণের দিন একসঙ্গে যাব। কিন্তু তা তো আর হলো না!
অনুলিখন: মনজুর কাদের